হোম > প্রযুক্তি

প্যারিস এআই সামিট

বিশ্বনেতাদের মিলনমেলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ

মোস্তাফিজ মিঠু, ঢাকা

সামিটের উদ্বোধন করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তৃতীয় এআই অ্যাকশন সামিট। ফ্রান্সের গ্র্যান্ড প্যালেসে আয়োজিত এই সামিটে আলোচনার মূল বিষয় ছিল এআই প্রযুক্তির ব্যবহার এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক নীতিমালা নির্ধারণ। সেই সামিটে ১০০টির বেশি দেশের প্রতিনিধি, প্রযুক্তিবিদ, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ীরা একত্র হয়েছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালার চুক্তি সই করতে রাজি হয়নি।

সামিটের উদ্দেশ্য

এই সামিটের মূল উদ্দেশ্য ছিল এআই প্রযুক্তি-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো। সেই সঙ্গে এআইয়ের ব্যবহার, নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন নিয়ে একটি সুসংহত নীতি প্রণয়ন করা। সামিটে আলোচনার উল্লেখ করার মতো বিষয় ছিল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। একই সঙ্গে এর সঠিক ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আন্তর্জাতিক সমন্বয় তৈরি করা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ‘এই সামিট ইউরোপের জন্য একটি সতর্কসংকেত। কারণ, আমরা এআইয়ের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছি।’

৬ বিষয়ে চুক্তি

সামিট শেষে ৬০টি দেশের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করা হয়েছে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশগুলো বিশ্বব্যাপী এআইয়ের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ব্যবহার নিরাপদ, সুষম এবং নৈতিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

চুক্তির মূল বিষয়

সর্বজনীন এআই: এআই প্রযুক্তি এমনভাবে তৈরি করা, যা সবার জন্য ব্যবহার করার উপযোগী হয়।

উন্নতি ও উদ্ভাবন: এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা।

ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান: ভবিষ্যতে এআই কর্মসংস্থান ও টেকসই বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করবে।

টেকসই এআই: মানুষ ও পৃথিবীর জন্য এআই প্রযুক্তি টেকসই হতে হবে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় সাধন।

বিশ্বনেতাদের উপস্থিতি

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এই সামিটের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘এআইয়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের শক্তিশালী নীতিমালা গড়ে তুলতে হবে, যা সমাজের উন্নয়ন ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মানজনক হবে। আমরা ভবিষ্যতের টেকসই এআই প্রযুক্তিতে সহযোগিতায় প্রস্তুত।’

ইউরোপীয় কমিশনের ডিজিটাল প্রধান হেনা ভার্ক্কুনেনও সামিটে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এআইয়ের নীতিমালার জন্য ইউরোপের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, ইউরোপের জন্য এআই বিধি প্রণয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যা প্রযুক্তির নিরাপত্তা এবং সঠিক ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া প্রযুক্তি খাতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরাও সামিটে অংশ নিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে গুগল, মাইক্রোসফট ও সেলসফোর্সের মতো বিভিন্ন সংস্থার সিইওরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাঁদের অভিমত ব্যক্ত করেন।

বিশ্বের সম্মিলিত উদ্যোগ

এই সামিটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে একটি নতুন আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সূচনা হয়। এটি কারেন্ট এআই নামে পরিচিত। এতে ফ্রান্স, জার্মানি, গুগল, সেলসফোর্সসহ অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো, পাঁচ বছরের মধ্যে এআই গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য ২৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা। এই উদ্যোগে একত্র হওয়া দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বব্যাপী এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং এর সঠিক ব্যবহারের জন্য একযোগে কাজ করবে। ফ্রান্সে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগের জন্য ১০৯ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা এআই শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই ঘোষণা এআই প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে ফ্রান্সকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ করে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরোধ

এই সামিটের ফল হিসেবে একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করা হয়েছে। যেখানে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এই ঘোষণাপত্রে সই করেনি। এ ঘটনা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিছু জটিলতা সামনে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা না দেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স এআই খাতে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অতিরিক্ত নিয়মকানুন উদ্ভাবনকে হত্যা করতে পারে।’ অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, চুক্তিটি জাতীয় নিরাপত্তা ও গ্লোবাল গভর্ন্যান্সের প্রশ্নগুলোর যথাযথ সমাধান দেয়নি। তাই তাঁরা স্বাক্ষর করেননি।

তৃতীয় প্যারিস এআই অ্যাকশন সামিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিলনমেলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে পুরো বিশ্বে। ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি হয়ে যাওয়া এ সম্মেলন এআইয়ের নিরাপদ এবং নৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করেছে। আশা করা যাচ্ছে, এই উদ্যোগগুলোর মধ্য দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শক্তি বিশ্বব্যাপী সব মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা হবে।

সূত্র: আল জাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ান

চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ধারণাকে প্রাধান্য দেয়

মিরর ব্যাকটেরিয়া কি আধুনিক পৃথিবীর নতুন মারণাস্ত্র

অনলাইনে কেনাকাটার নিরাপদ উপায়

গুগলের নতুন ফিচার: সাধারণ হেডফোনই হবে রিয়েল–টাইম অনুবাদক

ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্রকল্প: পাঁচ বছরে অর্ধেক কাজ, ব্যয় বাড়ল ১৭৮ কোটি

যুক্তরাষ্ট্রে মাকে হত্যার পর ছেলের আত্মহত্যা, চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবারের

মিসড কল মেসেজ ও ছবি থেকে অ্যানিমেশনসহ যেসব ফিচার আনল হোয়াটসঅ্যাপ

অস্ট্রেলিয়ায় ২ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ: ‘এটা কাজ করছে না ব্রো’— প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ জেন-জি’দের

সকালে ঘুম ভেঙে অস্ট্রেলিয়ার লাখো শিশু দেখবে তাদের ‘আইডি’ উধাও

ভারতে ১৭.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে মাইক্রোসফট