বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সিনিয়র সহকারী কোচের দায়িত্বে মোহাম্মদ সালাহ উদ্দীনের এক বছর হতে চলল। সিনিয়র সহকারী কোচ হলেও ব্যাটিংটা তিনি বেশি দেখভাল করছেন। কিন্তু সালাহ উদ্দীন দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ বেশির ভাগ ম্যাচই হেরেছে ব্যাটারদের ব্যর্থতায়। স্বীকৃত ব্যাটাররা খামখেয়ালি ব্যাটিংয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসছেন।
মিরপুরের বধ্যভূমিতে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে সমালোচনা, ব্যঙ্গবিদ্রুপ তো কম হয়নি। কালো মাটির উইকেটে ব্যাটারদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে গেছে। চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে তুলনামূলক ভালো উইকেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হলেও প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটাররা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। অধিনায়ক লিটন দাসসহ সাইফ হাসান, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, নুরুল হাসান সোহানরা যেখানে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে ব্যর্থ, সেখানে তানজিম হাসান সাকিব দেখিয়েছেন কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়। সাত নম্বরে নেমে ২৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ রানের ইনিংস খেলেছেন তানজিম সাকিব।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৬ রানে জিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ হারের পর বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে এসে তানজিম সাকিব উল্লেখ করেছেন সালাহ উদ্দীনের কথা। তানজিম সাকিব বলেন, ‘ব্যাটিংয়ে সব সময় সালাহ উদ্দীন স্যার অনেক আত্মবিশ্বাস দেন। তিনি অনুশীলনের সময় অনেক ব্যাটিং করান। সেটা আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। ক্রিকেটাররা আমাকে এই ভরসা দেয় যে আমি রান করতে পারব।’
১৬৬ রানের লক্ষ্যে নেমে ১২ ওভারে ৬ উইকেটে ৭৭ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ। প্রথম ছয় ব্যাটারের মধ্যে লিটন, সাইফ, শামীম, সোহানরা আউট হয়েছেন এক অঙ্কের ঘরে। জেসন হোল্ডারকে পুল করতে গিয়ে শামীম যেভাবে বোল্ড হয়েছেন, সেটার কড়া সমালোচনা করেছেন লিটন। এ ছাড়া তানজিদ হাসান তামিম ৫ বলে ১৫ রান করলেও উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। তাওহীদ হৃদয় ২৮ রান করতে খেলেছেন ২৫ বল। হাতে ৪ উইকেট নিয়ে ৮ ওভারে ৮৯ রান দরকার হলেও বাংলাদেশের আশা জাগিয়েছিলেন তানজিম সাকিব ও নাসুম আহমেদ। সপ্তম উইকেটে ২৩ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন তানজিম সাকিব-নাসুম। তবে এই জুটি ভাঙতেই শেষ বাংলাদেশের আশা। স্বাগতিকেরা ১৯.৪ ওভারে ১৪৯ রানে গুটিয়ে যায়।
২৭ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেললেও ম্যাচ জিততে না পারার আক্ষেপ ঝরছে তানজিম সাকিবের। বাংলাদেশের তরুণ পেসার বলেন, ‘শেষ করতে পারলে খুব ভালো লাগত। আমি থিতু হয়ে গিয়েছিলাম। বল ব্যাটে আসছিল দারুণভাবেই। নাসুম ভাইও আমাকে দারুণ সমর্থন দিচ্ছিলেন। বাউন্ডারি মারছিলেন। মনে হচ্ছিল এক ব্যাটারের সঙ্গে ব্যাটিং করেছি।’
সাকিবের একেকটা শটে চট্টগ্রামের গ্যালারিতে শোনা যাচ্ছিল ‘সাকিব, সাকিব’ স্লোগান। একটা সময় যে স্লোগানটা শোনা যেত সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। তারকা অলরাউন্ডার সাকিবের পরিবর্তে এবার পেসার সাকিবের ব্যাটিং দেখে গ্যালারিতে থাকা দর্শকেরা তাঁর (তানজিম সাকিব) নামে হর্ষধ্বনি করেছেন। তানজিম সাকিব কি তা টের পেয়েছিলেন? উত্তরে বাংলাদেশের এই তরুণ পেসার বলেন, ‘কানে এসেছে অবশ্যই। কিন্তু আমি আসলে চাপের মুহূর্তে ছিলাম তো। তখন পরিকল্পনা করছিলাম পরের বলে কী করতে পারি। সেটা নিয়ে ভাবছিলাম এবং স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে সমীকরণ দেখছিলাম।’
তানজিম সাকিব ব্যাটিংটা যে একেবারে পারেন না তা নয়। বয়সভিত্তিক দল থেকে তাঁর অলরাউন্ড সত্তার পরিচয় পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দেখিয়েছেন ঝলক। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাঁর একটা ফিফটিও রয়েছে। এ বছরের মে মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে লাহোরে ৩১ বলে ১ চার ও ৫ ছক্কায় ৫০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।