সাকিব আল হাসানের কাছে যে ২০২৩ বিশ্বকাপই শেষ বিশ্বকাপ, তা আগেই জানা গিয়েছিল। সেই বিশ্বকাপ বাংলাদেশ খেলতে গেছে সাকিবের নেতৃত্ব। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এবারের বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হওয়ার আগেই শেষ হয়েছে সাকিবের বিশ্বকাপ। চোটে পড়ায় এবারের বিশ্বকাপে আগেভাগেই দেশে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশের বাহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডারকে। একের পর এক রেকর্ড গড়া সাকিবের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল এভাবেই।
২০০৬ সালে ১৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় সাকিবের। ঠিক তার পরের বছর ২০০৭ বিশ্বকাপেই সুযোগ পেয়ে যান তিনি। পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ২০ বছর বয়সে শুরু হয় সাকিবের বিশ্বকাপ অভিযান। ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ৫ উইকেটের জয়ের ম্যাচেই ফিফটির দেখা পান সাকিব। ৮৬ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় করেছেন ৫৩ রান। সেই ম্যাচে অবশ্য উইকেটের দেখা পাননি তিনি। এরপর একই মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেই বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট পেয়ে যান বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম উইকেট পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার অন্যতম সেরা ব্যাটার মাহেলা জয়বর্ধনেকে আউট করে।
২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইটে যেতে বারমুডাকে হারাতেই হতো বাংলাদেশকে। পোর্ট অব স্পেনে সেই ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন সাকিব। ৩ ওভার বোলিং করে ১২ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। বৃষ্টি আইনে ৭ উইকেটে জিতে সুপার এইট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সেই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ দেখায় দ্বিতীয় চমক। গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে সুপার এইটের ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৮৭ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে মার্ক বাউচার ও জাস্টিন কেম্প-এই দুই প্রোটিয়া ব্যাটারের গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। ভারতের পর সেই বিশ্বকাপে আরও এক ফিফটি পেয়েছেন তিনি। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিবের ৯৫ বলে ৫৭ রানের অপরাজিত ইনিংস ভেস্তে যায় বাংলাদেশ ৪ উইকেটে হেরে যাওয়ায়। নিজের প্রথম বিশ্বকাপে ২৮.৮৫ গড় ও ৫৭.২২ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২০২ রান। আর বোলিংয়ে ৪.৯৬ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৭ উইকেট।
২০১৯ বিশ্বকাপে ভেন্যু বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে ফরম্যাটও বদলে যায়। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপ ছিল ১০ দলের রাউন রবিন ফরম্যাটে। এই বিশ্বকাপে সাকিব ছিলেন অতিমানবীয় ফর্মে। ব্যাটিংয়ে ৮৬.৫৭ গড় ও ৯৬.০৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৬০৬ রান। যে ৮ ম্যাচ বাংলাদেশ খেলার সুযোগ পেয়েছিল, তার মধ্যে ৭ টিতেই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান-যে তিন ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছিল, সবগুলোতেই দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে হয়েছেন ম্যাচসেরা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কার্ডিফে ১১৯ বলে ১২১ রানের ইনিংসটাই ছিল সাকিবের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান-পাঁচ ম্যাচেই করেছেন ফিফটি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন সাকিব। বোলিংয়ে এই বিশ্বকাপে ৫.৩৯ ইকোনমিতে নিয়েছেন ১১ উইকেট।
২০০৭ থেকে ২০২৩-৫ বিশ্বকাপ খেলে ৩৬ ম্যাচে ৪১.৬২ গড় ও ৮২.২৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৩৩২ রান। বিশ্বকাপে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় আছেন ৭ নম্বরে। ২ সেঞ্চুরি ও ১১ ফিফটিতে ১৩টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন তিনি। পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার রেকর্ডে শচীন টেন্ডুলকার (২১), বিরাট কোহলির (১৪) পরেই আছেন সাকিব। আর বোলিংয়ে বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে ৫.১৪ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৪৩ উইকেট। স্পিনারদের মধ্যে বিশ্বকাপে সাকিবের ওপরে শুধুই আছেন ৬৮ উইকেট নেওয়া মুত্তিয়া মুরালিধরন।