দুর্ঘটনা গতকাল ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দিনই হয়েছিল। ব্লেয়ার টিকনার ডাইভ দিয়ে বাউন্ডারি ঠেকাতে গিয়ে মারাত্মক চোটে পড়ায় তৎক্ষণাৎ স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নেওয়া হয়েছিল। আজ দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু না হতেই তাঁকে নিয়ে আরও বড় দুঃসংবাদ পায় নিউজিল্যান্ড। বোলিং, ফিল্ডিং তো করতে পারবেনই না। এমনকি তাঁর ব্যাটিং করা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
বাঁ কাঁধের হাড় ভেঙে যাওয়ার কারণেই মূলত টিকনারকে নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে নিউজিল্যান্ডের। প্রথম ইনিংসে তিনি ব্যাটিং করেননি। এমনকি দ্বিতীয় ইনিংসেও কিউইরা ৯ উইকেট হারালে অলআউট হয়ে যেতে পারে। নিউজিল্যান্ড নাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আজ দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষেও বলার উপায় নেই কে এগিয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ৩২ রানে দিনের খেলা শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সফরকারীরা এখনো ৪১ রানে পিছিয়ে। যে টিকনারকে নিয়ে অনিশ্চয়তা, তিনি প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ৯ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৪ রানে আজ দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে নিউজিল্যান্ড। দলীয় ৩৬ রানে ভেঙে যায় কিউইদের উদ্বোধনী জুটি। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে টম লাথামকে (১১) বোল্ড করেন কেমার রোচ। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা কেইন উইলিয়ামসন তুলনামূলক আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন। তবে ফিফটি পূর্ণ করার আগেই ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন। ৪৬ বলে ৭ চারে ৩৭ রান করেন উইলিয়ামসন। আরেক ওপেনার ডেভন কনওয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১০৫ বলে ৬৭ রানের জুটি গড়তে অবদান রাখেন উইলিয়ামসন। ৩১তম ওভারের পঞ্চম বলে উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন অ্যান্ডারসন ফিলিপ।
উইলিয়ামসন ফেরার পর ছোটোখাটো ধস নামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে। মুহূর্তেই ৩৫.১ ওভারে ৪ উইকেটে ১১৭ রানে পরিণত হয় কিউইরা। ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে জাস্টিন গ্রিভসকে লেগ সাইডে ঘোরাতে যান ডেভন কনওয়ে। উইন্ডিজ উইকেটরক্ষক টেভিন ইমলাচ সহজেই সেটা তালুবন্দী করেছেন। ১০৮ বলে ৮ চারে ৬০ রান করেন কনওয়ে। পঞ্চম উইকেটে এরপর ১১৯ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়েন ড্যারিল মিচেল ও মিচেল হে। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি আগে খেললেও এই ম্যাচ নিয়ে টেস্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন হে।
৫৫তম ওভারের শেষ বলে মিচেলকে (২৫) ফিরিয়ে পঞ্চম উইকেটে গড়া পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি ভাঙেন ফিলিপ। এই জুটি ভাঙার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। টিকনার ব্যাটিং করতে না পারায় ৯ উইকেট পড়তেই শেষ কিউইদের ইনিংস। ৭৫তম ওভারের চতুর্থ বলে কিউইদের আরেক অভিষিক্ত ক্রিকেটার মাইকেল রেকে বোল্ড করেন জেইডেন সিলস।
৭৪.৪ ওভারে ২৭৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান এসেছে হের ব্যাট থেকে। ৯৩ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬০ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬০ রান করেন কনওয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিলিপ ১৩ ওভারে ৭০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ২ উইকেট পেয়েছেন কেমার রোচ। ৭৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা উইন্ডিজও হোঁচট খেয়েছে। ৭.৪ ওভারে ২ উইকেটে ২৫ রানে পরিণত হয় ক্যারিবীয়রা। নাইটওয়াচ ম্যান হিসেবে ফিলিপ নামলেও রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়েছেন। তাঁকে জ্যাকব ডাফি এলবিডব্লু করেছেন রিভিউর সাহায্য নিয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৩২ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে উইন্ডিজ। ব্র্যান্ডন কিং ১৫ ও ক্যাভেম হজ ৩ রানে আগামীকাল তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।
টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪১৮ রান তাড়া করে জয়ের কীর্তি এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিবীয়রা এই রান তাড়া করে জিতেছিল। ২২ বছরে এর চেয়ে বড় লক্ষ্য বারবার চতুর্থ ইনিংসে দলগুলোর সামনে এসেছিল। কিন্তু কেউই সফল হয়নি। ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ৫৩১ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্য দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। জাস্টিন গ্রিভসের ডাবল সেঞ্চুরিতে (২০২*) করে ম্যাচটা ড্র করেছিল ক্যারিবীয়রা। নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ১৮ ডিসেম্বর মাঠে গড়াবে।