মানব মস্তিষ্কে এমন কিছু নির্দিষ্ট নিউরনের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা যা কেবল গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সময়ই উদ্দীপিত হয়। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় ও টুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘কারেন্ট বায়োলজি’ সাময়িকীতে।
ওই গবেষণার বরাত দিয়ে বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স ডেইলিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব মস্তিষ্কে এমন কিছু নিউরন আছে যা কেবল নির্দিষ্টভাবে পাটিগণিতের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে কাজ করে। এমনকি হিসাব করার ক্ষেত্রে শব্দ বা প্রতীক যাই লেখা হোক নিউরনগুলো একইভাবে সাড়া দেয়।
জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় ও টুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ পরিচালনায় বন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের মৃগীরোগবিদ্যা বিভাগের ৫ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ রোগীর ওপর ওই গবেষণা চালানো হয়।
সাধারণত মৃগীরোগীর ক্ষেত্রে ‘খিঁচুনির নির্দেশনা’ সব সময় মস্তিষ্কের একই এলাকা থেকে সৃষ্টি হয়। ওই এলাকাটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে চিকিৎসকেরা রোগীদের মস্তিষ্কে বেশ কয়েকটি ইলেক্ট্রোড বসান। মস্তিষ্কের কার্যক্রম শনাক্ত করতে টেম্পোরাল লোবে ইলেকট্রোডগুলো বসানো হয়। এরপর তাঁদের সবাইকে বেশ কিছু গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হয়। পরে তাঁদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে গবেষকেরা দেখতে পান, যোগের ক্ষেত্রে যেসব নিউরন ব্যবহৃত হয়, বিয়োগ করতে গেলে ব্যবহৃত হয় একেবারে আলাদা কিছু নিউরন।
বন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মৃগীরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক দলের তত্ত্বাবধায়ক ফ্লোরিয়ান মরম্যান বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে বিয়োগের সময় যোগ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত নিউরনের চেয়ে আলাদা নিউরন ব্যবহৃত হয়েছে।’
ওই গবেষক দলের আরেক সদস্য এসথার কুটার বলেন, ‘বিষয়টি কেবল এমন নয় যে, একগুচ্ছ নিউরন কেবল গাণিতিক চিহ্ন যেমন যোগ (+) বা আরেকগুচ্ছ নিউরন কেবল বিয়োগ (-) চিহ্নের বিষয়ে উদ্দীপিত হয় বরং এই চিহ্নগুলো যখন শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয় তখনো নিউরনগুলো একইভাবে উদ্দীপিত হয়।’
এই গবেষণা থেকে আরও দেখা যায়, নির্দিষ্ট ওই নিউরনগুলো কেবল গাণিতিক নির্দেশকে ‘এনকোড’ করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে।
গবেষক দলের তত্ত্বাবধায়ক টুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দ্রে নেইডার বলেন, ‘বানরের ওপর চালানো পরীক্ষাগুলো থেকে জানি যে, নির্দিষ্ট গাণিতিক নিয়মের জন্য তাদের মস্তিষ্কেও আলাদা আলাদা নিউরন রয়েছে। তবে মানুষের মস্তিষ্কও এমন কি না এ বিষয়ে খুব কমই তথ্য ছিল।’
তিনি জানান, গবেষকেরা এই গবেষণায় মানব মস্তিষ্কের যেসব অংশ পর্যবেক্ষণ করেছেন তার মধ্যে একটি হলো প্যারাহিপোক্যাম্পাল করটেক্স। সেখানে গবেষকেরা এমন কিছু নিউরন খুঁজে পেয়েছেন যা যোগ বা বিয়োগের সময় বিশেষভাবে সক্রিয় হয়। যোগ বা বিয়োগ যাই হোক আলাদা কাজের সময় নিউরনগুলো পর্যায়ক্রমে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
গবেষকেরা মস্তিষ্কের এমন পরিবর্তনশীল ভূমিকাকে ‘গতিশীল কোডিং’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। অধ্যাপক মরম্যান বলেন, ‘এই গবেষণা মানব মস্তিষ্কের সাংকেতিক দক্ষতা বিশেষ করে গণনার বিষয়টি বোঝার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।’
গবেষণায় অর্থায়ন করেছে জার্মান রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও ভক্সওয়াগেন ফাউন্ডেশন।