বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ৪০ হাজার বছর আগে মারা যাওয়া একটি কিশোরী ম্যামথের দেহ থেকে প্রাচীন আরএনএ সংগ্রহ করেছেন। ‘ইউকা’ নাম দেওয়া ওই ম্যামথের দেহ সাইবেরিয়ার স্থায়ী তুষারস্তর বা পারমাফ্রস্টে জমে থাকা অবস্থায় মমি হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে ৪০ হাজার বছর পরও এর টিস্যুগুলো সংরক্ষিত অবস্থায় থেকে গেছে। এত প্রাচীন আরএনএ সিকোয়েন্স করার ঘটনা এবারই প্রথম এবং এই বিশ্লেষণ মৃত্যুর আগের মুহূর্তে প্রাণীটির কোষে কী ঘটছিল সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইডেনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষক লাভ ডালেন জানিয়েছেন—ডিএনএ সব কোষে একই থাকে, কিন্তু কোষের ধরনে পার্থক্য তৈরি করে আরএনএ। কোন জিন চালু বা বন্ধ আছে, কোন প্রোটিন তৈরি হচ্ছে, এসব তথ্য দেয় এই অস্থায়ী অণু। এত দিন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, আরএনএ খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং প্রাগৈতিহাসিক নমুনা থেকে এটি উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব।
সিএনএন জানিয়েছে, গবেষণা দলটি ১০টি হিমায়িত ম্যামথ টিস্যু পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে তিনটি থেকে আরএনএ পাওয়া গেলেও কেবল ইউকার পায়ের টিস্যু থেকেই বিস্তারিত জিনগত তথ্য পাওয়া গেছে। ওই নমুনায় পাওয়া গেছে মেসেঞ্জার-আরএনএ, যা কোষে প্রোটিন তৈরির নির্দেশ বহন করে এবং পাওয়া গেছে মাইক্রোআরএনএ, যা জিন নিয়ন্ত্রণ করে।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এমিলিও মারমোল সানচেজ জানিয়েছেন, আরএনএ-এর ধরন দেখেই বোঝা গেছে ইউকা মৃত্যুর খুব কাছাকাছি ছিল। আরএনএ সিকোয়েন্সে তার মাংসপেশির ক্রিয়াকলাপ দেখা গেছে, যা মৃত্যুর মুহূর্তে বাঁচার জন্য শেষ শক্তি ব্যবহার ও সংকোচনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সক্রিয় ছিল ‘টাইটিন’ ও ‘নেবুলিন’ নামের প্রোটিন—যেগুলো পেশির স্থিতিস্থাপকতা ও সংকোচনে ভূমিকা রাখে।
স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্ক ফ্রিডল্যান্ডার জানিয়েছেন, ম্যামথটির টিস্যুতে পাওয়া মাইক্রোআরএনএ প্রমাণ করেছে প্রাচীন এই প্রাণীটির দেহে মৃত্যুর ঠিক আগেও জিন নিয়ন্ত্রণ সক্রিয় ছিল। এ ধরনের তথ্য আগে কখনো পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণা ভবিষ্যতে অতীতের ভাইরাস—বিশেষ করে, আরএনএ-ভিত্তিক ভাইরাস বিশ্লেষণের নতুন পথ খুলে দিতে পারে। করোনাভাইরাসও এমন এক আরএনএ ভাইরাস। এ ছাড়া এটি বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনার প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন ডালেন। টেক্সাসভিত্তিক কোম্পানি ‘কোলসাল বায়োসায়েন্সস’ ইতিমধ্যেই ম্যামথ, ডোডো ও তাসমানিয়ান টাইগারকে ‘জিন-এডিটিং’ এর মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
এর আগেও কিছু প্রাচীন নমুনা থেকে আরএনএ উদ্ধার হয়েছিল। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ১৪ হাজার ৩০০ বছরের পুরোনো নেকড়ের চামড়া থেকে এবং ২০২৩ সালে তাসমানিয়ান টাইগারের ১৩০ বছর পুরোনো নমুনা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে ইউকার আরএনএ এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সিকোয়েন্স করা আরএনএ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অর্জন অতীতের জীবজগৎকে বোঝার ক্ষেত্রে নতুন এক যুগের সূচনা করতে পারে।