অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হককে আমরা একেবারেই ভুলতে বসেছি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন ইতিহাস থেকে অনেকটাই বিস্মৃত হতে চলেছেন শেরেবাংলা এবং তাঁর কবরের খবরও বেশির ভাগ লোকই জানে না।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ‘আজকের প্রেক্ষাপটে শেরেবাংলার প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করে শেরেবাংলা জাতীয় যুব ফাউন্ডেশন।
শেরেবাংলার অবদানকে সঠিকভাবে স্বীকার করা হয়নি—এমন আক্ষেপ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমরা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হককে একেবারেই ভুলতে বসেছি। পাঠ্যপুস্তক বাদ দেন, অন্যান্য যে বিষয়গুলো আছে, সেখানেও কিন্তু শেরেবাংলার প্রাসঙ্গিকতা খুব একটা আসে না। কেউ কি জানে, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের যে কবর, সেটা এখান থেকে খুব কাছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিন নেতার কবর আছে, যার মধ্যে শেরেবাংলা একজন। আমাদের বেশির ভাগ লোকেই জানে না। আগে সেখানে ফুল দিতে দেখতাম, এখন তাও দেয় কি না জানি না।’
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে কিন্তু একজন নেতা ছাড়া আর কারও কোনো নাম-গন্ধও নেই। যারা স্কুলে পড়ে, তারা একজনের নামই জানে। আর কারও নাম জানে না। এমনকি যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, তারাও শেরেবাংলার নাম ভুলে যেতে বসেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একটা মাত্র পরিবার, একটি মাত্র দর্শন, তাকে সামনে নিয়ে আসার জন্য, তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আজকে সমগ্র বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই এই বক্তব্য তাদের ছিল, একটা বক্তব্য তারা প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করেছে যে, এক নেতার এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। আর ছিল মুজিববাদ। মুজিববাদকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আর কিছু থাকবে না। বাংলাদেশের ইতিহাস, বাংলাদেশের যা কিছু আছে, সবকিছুই এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হবে। তখন তারা ব্যর্থ হয়েছিল,পারেনি। এবার তারা ভিন্ন প্রক্রিয়ায়, ভিন্ন কৌশলে সেই মতবাদকে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেকাংশে সফল হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ইতিহাসের যে জায়গায় শেরেবাংলার থাকার কথা, সেখানে তাঁকে রাখা হয়নি। আজকে একটি রাজনৈতিক দল ইতিহাস রচনা করছে। একটি গোষ্ঠীর, পরিবারের ইতিহাস রচনা করা হচ্ছে। সেখানে সত্যিকারের নায়কেরা হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতিহাসের সংকটে ভুগছে। এই অবস্থা থেকে বেরোতে হবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে সব নায়কদের মুছে ফেলতে কাজ করছে। তারা এক ব্যক্তিকে মহানায়ক বানিয়েছে। ইতিহাসের অন্য নায়কদের অবদানকে অস্বীকার করেছে। এমনকি শেরেবাংলার মতো একজন মহান নেতার অবদানকেও অস্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ। ইতিহাস বিকৃতির অপরাধে একদিন আওয়ামী লীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
আখতারুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ্ প্রিন্স, বিএনপির বিদেশবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।