মানুষের অধিকার, ভোটের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার সব খর্ব হয়েছে। বিনা ভোটে একদলীয় সরকারব্যবস্থা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অধিকার কেড়ে নিয়ে তাঁর মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।
আজ শুক্রবার বিকেলে গুলশানের হোটেল লেকশোরে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘ডিজেনফ্রেনচাইজমেন্ট আন্ডার দ্য অথোরেটিরিয়ান রেজিম’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল আরও বলেন, ‘৫০ বছরেও দেশ আজ স্বাধীন নয়। জনগণের সরকার কায়েমের মাধ্যমে মানবাধিকার পুনরায় কায়েম করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ দরকার। স্বাধীনতার ৫০ বছর চলছে। দেশে কোনো স্বাধীনতা নাই, মৌলিক অধিকার নাই। আমি একজন ক্ষুদ্র মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধে আহত হয়েছিলাম। আমার সঙ্গী-সাথিরা অনেকেই জীবন দিয়েছে। আমার কমান্ডার জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা বিচার বিভাগ নিয়ে কথা বলেন, ‘মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার কথা বলেন, অথচ নির্বাচনে মানুষের ভোটের মূল অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন, যিনি কিনা গণতন্ত্রের মা, তাঁর চিকিৎসার অধিকার কেড়ে নিয়ে মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। বিচার বিভাগ ও মানুষের বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
এ অনুষ্ঠানে বিগত কয়েক বছরের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যরা আসেন। তাঁরা তাঁদের দুর্বিষহ জীবনের কথা তুলে ধরেন।
নোয়াখালী লক্ষ্মীপুরের তৃণমূল বিএনপির নেতার স্ত্রী পূর্ণিমা। তাঁর স্বামী আট বছর আগে গুম হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার স্বামী গুম হয়েছেন আট বছর। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন, সেটা আজও জানি না। বাহিনীর পরিচয়ে তাঁকে তুলে নেওয়ার পর আর ফিরে আসেননি। শুধু তাই নয়, আমার দেবরও শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে হামলার শিকার হন। এসব করেই তাঁরা শান্ত হয়নি, আমার সন্তানও নিখোঁজ হয়ে যায়। নিখোঁজের তিন দিন পরে ফিরে পাই আমার সন্তানকে। শুধু বিএনপি করার কারণে আমরা কতটা অনিরাপদ, ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপন করছি, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। এটা কোন ধরনের স্বাধীন দেশে আমরা আছি!’
২০১১ সালে গুম হন নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের নেতা মাহমুদুর রহমান বাপ্পি। এরপর তাঁর বোন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতনের খড়্গ। সুমনের বোন ঝুমুর আক্তার বলেন, ‘১১ সালে গুম হওয়ার পরে আমার ভাইকে খুঁজতে র্যাব, পুলিশ, ডিবিসহ সব বাহিনীর অফিসে অফিসে যাই। কেউ ভাইকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করে না। কিছুদিন পর দেখি ভাইকে কোর্টে চালান করে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেই আমার ভাইকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। ভাই মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমার বাবা মারা যান স্ট্রোক করে। এরপর আমিসহ আমার পরিবারের সবাইকে একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। আমিও জেল খেটেছি,আমাকে জেলে রেখে ভাইকে হত্যার সওদা করা হয়েছে। আমাদের বাড়িঘর, সব জমিজমা আওয়ামী লীগের নেতারা দখল করে নিয়েছে। আমরা এই স্বাধীন দেশে কী ধরনের স্বাধীনতা উপভোগ করছি, সেটা ভেবে পাই না! আমরা কি এমন স্বাধীনতা চেয়েছিলাম?’
এ ছাড়া আরও কথা বলেন বিএনপির গুম হওয়া নেতা ইলিয়াস আলীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধি, কানাডার প্রতিনিধি, ডিআই এবং এনডিএর প্রধিনিধিরা।