জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছি, তাতে আমরা মনে করি, আগামী সংসদ নির্বাচনে যারা সংস্কারের পক্ষে থাকবে, তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। সেই জায়গা থেকে বলতে পারি, সংস্কারের পক্ষের শক্তি হিসেবে আমরা সরকার গঠন করতে পারব।’
আজ শুক্রবার ঝালকাঠির ফাতেমা কনভেনশন সেন্টারে জেলা এনসিপির সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচন নাও করতে পারি। কারণ, আপনারা দেখেছেন, বর্তমানে সচিবালয়ে ডিসি ভাগাভাগি চলছে, এসপি ভাগাভাগি চলছে। বড় বড় রাজনৈতিক দল গনিমতের মাল হিসেবে ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসিসহ কর্মকর্তাদের ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। অথচ তারা হচ্ছে খেলার রেফারি। তাদের প্লেয়ার বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে।’
নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে হাসনাত বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কেও আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলছি। আপনারা দেখেছেন, নির্বাচন কমিশন একধরনের ব্যক্তিগত ইচ্ছানির্ভর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যেমন–প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে তাদের কোনো নীতিমালা নেই। কোন প্রতীক অন্তর্ভুক্ত হবে, সেটারও কোনো নীতিমালা নেই। কেন আলু-মুলা যুক্ত করা হয়েছে, তারও কোনো ব্যাখ্যা নেই। আবার কেন শাপলা কলি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, সেটাও নীতিমালাবহির্ভূত। অর্থাৎ তারা যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবেই করছে।’
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনে গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যেসব লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? আমরা জেনেছি, নির্বাচন কমিশনের দেড় কোটি মৃত ভোটার রয়েছে। তাদের আমরা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে “কবর থেকে উঠে ভোট দিতে” দেখেছি।
‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করা এখন অপ্রাসঙ্গিক। বিভিন্ন দলের সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু তা এক টেবিলে বসে আলোচনা করা সম্ভব। আওয়ামী লীগের কোনো জনসমর্থন নেই। যদি থাকত, তবে ৫ আগস্ট তারা পালিয়ে গেল কেন? তখন তো কেউ প্রতিহত করার সাহস করেনি। সুতরাং, তাদের কোনো জনসমর্থন নেই।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যারা জিহ্বা, লেখনী ও মিডিয়ার শক্তি দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বৈধতা দিয়েছে, আপনারা দেখেছেন, আগে যদি কোনো ছাত্রদল বা শিবির নেতাকে গুম, হত্যা বা গ্রেপ্তার করা হতো, তখন মিডিয়ায় প্রচার করা হতো যে “তিন শিবিরকর্মী পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে’’। যারা তাদের এই বৈধতা দিয়েছে, তারাই এখন আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনতে চায়।’
এনসিপির এ নেতা আরও বলেন, ২০২৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কারণে গণতন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছে—এই বক্তব্য যারা উৎপাদন করেছে, তারাই এখন টকশোতে এসে ‘নরমালাইজ’ করছে। তারা তখন আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ছিল, কিন্তু এখন তারা আবির্ভূত হয়েছে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, লেখক অথবা সাংস্কৃতিককর্মী হিসেবে।
এ সময় এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) মাহমুদা আলম মিতু, যুগ্ম সদস্যসচিব মশিউর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন, সদস্য রফিকুল ইসলাম কনক, বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, বরিশাল জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাঈদ মুসা, জাতীয় যুবশক্তির সংগঠক পলাশ, জাতীয় শ্রমিক শক্তির সংগঠক নাজমুল ইসলাম টিটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।