বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার নয়, গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। আমার অনুরোধ, কোনো রাজনৈতিক চিন্তা নয়, দল নয়, সব গণতন্ত্রকামী মানুষের এক হওয়ার সময় এসেছে।’
আজ সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিবাদ সভাটির আয়োজন করে সম্পাদক পরিষদ এবং নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি জানি না আমরা এই মুহূর্তে কোন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আছি। আমার বয়স ৭৮। সারা জীবন সংগ্রাম করেছি একটা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ দেখব বলে। আজ যে বাংলাদেশ দেখছি, এ বাংলাদেশের স্বপ্ন আমি কোনো দিন দেখিনি।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমার স্বাধীনভাবে চিন্তা করার যে অধিকার, আমার কথা বলার যে অধিকার, তার ওপর আবার আঘাত এসেছে, জুলাই যুদ্ধের ওপর আঘাত এসেছে। জুলাই যুদ্ধ ছিল এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। আজ সেই জায়গায় আঘাত এসেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যারা অন্ধকার থেকে আলোতে আসতে চাই, আমরা যারা আমাদের বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চাই, তাদের শুধু সচেতন হলে চলবে না, রুখে দাঁড়াতে হবে। এখন রুখে দাঁড়ানোর সময় এসে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের আহ্বান জানাব, এখানে এসে শুধু একাত্মতা ঘোষণা নয়, মানববন্ধন করে সংহতি প্রকাশ করা নয়, আজ সর্বক্ষেত্রে সর্বশক্তি নিয়ে আপনারা যারা বাংলাদেশকে ভালবাসেন—তাঁরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হন, এই অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।’
প্রতিবাদ সভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হওয়া মব ভায়োলেন্সের সঙ্গে সরকারের একটি অংশের সমর্থন আছে; রাজনৈতিক সমর্থন আছে—এ ছাড়া এটি করা সম্ভব হতো না।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘এই হামলা আমরা মেনে নিতে পারি না। এটাই যাতে ফুল স্টপ হয়। পতিত স্বৈরাচার তাদের সময় সে কাজ তারা করেছিল সাংবাদিকদের ওপর, সংবাদপত্রের ওপর, মিডিয়ার ওপর, এমনকি খুবই সিনিয়র সম্পাদকদের ওপর হামলা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় এসে এটা ফুল স্টপ হবে—এটা আমরা আশা করি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বটি তারা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা মনে করি, এখানে অবশ্যই সরকারের দায়িত্ব ছিল।’
নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, পৃথিবীর সব জায়গায় সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব সম্পাদকীয় নীতি থাকে। সে নীতি পছন্দ না হলে গণমাধ্যমে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কোনো গণতন্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই দিন ২৬-২৭ জন স্টাফ ভবনের ভেতরে আটকে ছিল, ফায়ার সার্ভিসকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের উদ্দেশ্য শুধু ভবনে আগুন দেওয়া ছিল না, হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল।’
প্রতিবাদ সভায় আরও ছিলেন নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।