জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক ডাকসু জিএস জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলেসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর করোনা পজিটিভ আসে। তাঁকে প্রথমে ধানমন্ডির ল্যাবএইডে এবং পরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তবে প্রতিদিন তাঁর ১০০ লিটারের বেশি অক্সিজেন সাপোর্ট লাগায় বিদেশে নেওয়াটাও জটিল হয়ে পড়ে।
শনিবার দুপুর একটার দিকে কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মরদেহ আনা হয়। সেখানে দলের নেতা কর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা বাবলু দুই দফায় জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। মহাসচিবের মৃত্যুতে পার্টির নেতা-কর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ অনেকে।
জাতীয় পার্টিতে বাবলুর অবদানের কথা স্বীকার এক শোকবার্তায় জি এম কাদের বলেন, ‘মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সব সময় ছিলেন আপসহীন। তিনি অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন আজীবন। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ছিলেন গণমানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে উজ্জ্বল ধ্রুবতারা।’
দলের মহাসচিবের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। এর অংশ হিসাবে তিন দিন (শনি থেকে সোমবার) পার্টির প্রতিটি কার্যালয়ে দলীয় ও কালো পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। রোববার বিকেল ৩টায় কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে শোক সভা অনুষ্ঠিত হবে। শোক সভায় জি এম কাদেরসহ জাতীয় পার্টি শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও প্রয়াত মহাসচিবের স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তাঁর বাবা আবুল কাশেম ছিলেন একজন পল্লি চিকিৎসক। সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতাপশালী ছাত্রনেতা ছিলেন বাবলু। পরে তিনি ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। এরশাদের শাসনামলে জ্বালানি উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা ছাড়াও পরবর্তীতে এই দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং পর্যটনমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকাকালে ২০১৪ সালে দলের মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাবলুকে। সে দায়িত্বে তিনি ছিলেন ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। পরে ২০২০ সালের জুলাই মাসে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে নিয়ে দলে অস্থিরতা দেখা দিলে তাঁকে হটিয়ে বাবলুকে আবার মহাসচিবের দায়িত্বে নিয়ে আসেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালে (চট্টগ্রাম-৯) আসন থেকে দশম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন বাবলু। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদের নির্দেশে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর প্রথম স্ত্রী ফরিদা সরকার। তিনি ২০০৫ সালে মারা যান। পরে ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি এরশাদের ভাগনি মেহেজেবুন্নেসা টুম্পাকে বিয়ে করেন। রাজনীতির পাশাপাশি বেসরকারি ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।