হোম > জাতীয়

৫০ জেলায় ডিসি নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় তিন মাস আগে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই পদায়ন নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের বঞ্চিত অনেক কর্মকর্তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ‘যথাসম্ভব’ দূরে রাখতে গিয়ে মাঠ প্রশাসনের কাজে অভিজ্ঞতা না থাকা কর্মকর্তাদেরও ডিসি নিয়োগ, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অনেককে ডিসি নিয়োগের ফিট লিস্টে না রাখা কিংবা রাখলেও নিয়োগ না দেওয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার পর কয়েকজনের নিয়োগ বাতিল, কয়েক জেলায় একাধিকবার বদল এবং প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত ইকোনমিক ক্যাডারের কয়েকজনকে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়ায় এই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিজেদের বেশি বঞ্চিত মনে করছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৮ নভেম্বর ১৫ জেলায়, ৯ নভেম্বর ১৪ জেলায় এবং সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর পৃথক প্রজ্ঞাপনে ২৩ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ করে। এর মধ্যে ৮ নভেম্বর নিয়োগপ্রাপ্ত দুজনের নিয়োগ ১৩ নভেম্বর বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ জন্য নির্বাচনের আগে এই পদকে খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সূত্র বলেছে, এবারের ডিসি নিয়োগে বিসিএসের ২৫, ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচ এবং প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ডিসিদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাঁদের ১৭ জন ২৫তম ব্যাচের, ২৬ জন ২৭তম ব্যাচের, ৬ জন ২৮তম ব্যাচের, ৯ জন ২৯তম ব্যাচের এবং ৬ জন প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা। এঁদের অনেকের মাঠ প্রশাসনে কাজের অভিজ্ঞতা নেই, বলেছেন কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, ২৫তম ব্যাচের নিয়োগ বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। ২৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা চারদলীয় জোট সরকারের আমলে হলেও নিয়োগ হয় এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। ২৮তম ব্যাচের পরীক্ষা এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হলেও নিয়োগ হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ২৯তম ব্যাচের পরীক্ষা ও নিয়োগ হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

সূত্র আরও জানায়, ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকায় এই ব্যাচের অনেকে ডিসি নিয়োগের ফিট লিস্টে জায়গা পাননি। আবার কেউ কেউ ফিট লিস্টে থাকলেও ডিসি পদে নিয়োগ পাননি। এই ব্যাচের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউএনওর পদে থাকায় ২০১৮ সালে পদাধিকারবলে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল। এটি তো দোষের নয়। তাঁরা ভোট গ্রহণ কার্যক্রমে কোনো অনিয়ম করেছেন কি না, সরকার চাইলেই তদন্ত করে তা বের করতে পারে। তা না করে তাঁদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।

জানা যায়, বিগত তিন সংসদ নির্বাচনের সময় মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বে থাকা বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে ডিসি নিয়োগের ফিট লিস্টে রাখা হয়নি। এঁদের একজন বলেন, ডিসি পদে নিয়োগের অন্যতম শর্ত হিসেবে মাঠে কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলা থাকলেও তা তাঁদের জন্য কাল হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন থেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। পরে ওই সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে এসে গত ৮ আগস্ট ওই কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ওই তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের আসন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়া থেকে ‘যথাসম্ভব’ বিরত থাকতে হবে।

সূত্র জানায়, জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির অনুমোদন নিয়ে ডিসি নিয়োগের বাধ্যবাধকতা থাকায় কয়েকটি জেলা থেকে ডিসি প্রত্যাহার করার কয়েক দিন পরও নতুন ডিসি দিতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই জটিলতা এড়াতে গত ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি বাতিল করে সরকার। ফলে ডিসি নিয়োগের পুরো কর্তৃত্ব এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হাতে।

ডিসিসহ কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতির কার্যক্রম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের মাধ্যমে করা হয়। এই অনুবিভাগের প্রধানের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হককে ৯ অক্টোবর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পদে বদলি করার পর থেকে এডিপি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের পদটি ফাঁকা রয়েছে।

চলতি বছরের ৭ জুলাই থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৪ জন কর্মকর্তাকে ৬৪ জেলায় ডিসি পদে পদায়ন করা হয়। আপত্তি ওঠায় কয়েকজনের নিয়োগও বাতিল করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর নওগাঁর ডিসি মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালকে চট্টগ্রামের ডিসি হিসেবে বদলি করা হলেও ১৫ অক্টোবর সেই নিয়োগ বাতিল করে ফেনীর ডিসি সাইফুল ইসলামকে চট্টগ্রামের ডিসি পদে বদলি করা হয়। পরে ১৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইমলাম মিঞাকে চট্টগ্রামের ডিসি পদে বদলি করা হয়। পরে এই নিয়োগ বাতিল করে চট্টগ্রামের ডিসি পদে সাইফুল ইসলামের নিয়োগ বহাল রাখা হয়েছে।

৮ নভেম্বর সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহকে বরগুনার ডিসি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব লুৎফুন নাহারকে মেহেরপুরের ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ১৩ নভেম্বর তাঁদের নিয়োগ বাতিল করে ওই দুই জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৮ নভেম্বর বরগুনার ডিসি মোহাম্মদ শফিউল আলমকে ঢাকার ডিসি পদে বদলি করা হলেও পরে বাতিল করা হয়। ১৩ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. রেজাউল করিমকে ঢাকার ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়।

সূত্র বলেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি ডিসি নিয়োগের ফিট লিস্ট তৈরি করে। এরপর এপিডি অনুবিভাগ ডিসি পদে নিয়োগের সুপারিশ করে। পরে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ডিসি নিয়োগ হয়। তবে কর্মকর্তা বাছাইয়ের মূল কাজটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এপিডি উইং দুর্বল হয়ে পড়ায় এখন ডিসি নিয়োগের প্রস্তাবেই ঝামেলা থাকছে। এ ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী ডিসি নিয়োগ দিতে গিয়েও মন্ত্রণালয় জটিলতায় পড়েছে। ডিসির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে উপদেষ্টার চারজন একান্ত সচিব এবং একজন বিশেষ সহকারীর একজন একান্ত সচিব রয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, গত তিন নির্বাচনে ভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ডিসি পদে নিয়োগ না দেওয়া হলেও এখন ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিসি নিয়োগের ফিট লিস্টে থাকা কর্মকর্তাদেরও কেউ কেউ অনানুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে উপর মহলে পৌঁছে দিচ্ছেন। এ ছাড়া নিজেদের পছন্দের কর্মকর্তাদের ডিসি নিয়োগ দিতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর চাপও রয়েছে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা সবাইকে আগামী নির্বাচনের কার্যক্রম থেকে ঢালাও বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাঁকে বাদ রাখা যায়। মাঠে কাজের অভিজ্ঞতা না থাকা কর্মকর্তাদের ডিসি নিয়োগ দিলে তাঁরা নির্বাচন করতে সমস্যায় পড়বেন। কারণ, নির্বাচন জটিল বিষয় এবং নানা ধরনের খেলা হয়। প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারা চাইলে ভোটে প্রভাব রাখতে পারেন। তাঁদের সবাইকে কি আগামী ভোটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে?

মনোনয়নপত্র নিলেন ৩১৪৪ জন, আগামীকালই দাখিলের শেষ সময়

আগামী মঙ্গলবার অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

আজ রাতে চাঁদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ

৬ শিক্ষানবিশ এএসপিকে চাকরি থেকে অপসারণ

সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের ‘অতিরঞ্জিত’ মন্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

নির্বাচন সামনে রেখে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয় পরিদর্শন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা

মনোনয়নপত্রে সন্তানের আয়ের তথ্য দেওয়া ঐচ্ছিক—বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর ইসির চিঠি

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা