হোম > জাতীয়

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

হাসিনার মামলার রায় আজ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎

শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুন। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হওয়া মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ সোমবার। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করবেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম কোনো মামলার রায় হচ্ছে আজ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালেরও প্রথম রায় হবে এটি। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের চার মাস পর এই মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। রায় ঘোষণার কার্যক্রম টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, সুপ্রিম কোর্ট এলাকাসহ আশপাশে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্য- বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা এই মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তাঁদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক রয়েছেন। কারাগারে থাকা চৌধুরী মামুন এই মামলায় অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন।

প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণের দাবি করে তাঁদের সর্বোচ্চ সাজা (মৃত্যুদণ্ড) প্রত্যাশা করেছে। তবে চৌধুরী মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় তাঁর সাজার বিষয়ে প্রসিকিউশন কোনো আবেদন না জানিয়ে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান খালাস পাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তাঁদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। এদিকে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে গতকাল রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় মিছিল করেছেন বিএনপিপন্থী শতাধিক আইনজীবী।

ট্রাইব্যুনাল-১-এর অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এই মামলায় গত ২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের জন্য গত বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিন রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

চলতি বছরের ১ জুন এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। সেদিন অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হওয়ায় হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে ১৬ জুন নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। বিজ্ঞপ্তি জারির পরও হাজির না হলে ২৪ জুন দুজনের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮-এর সাবেক বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ গঠনের আগে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে আবেদন করেন চৌধুরী মামুন। পরে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিও দেন।

৩ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের সূচনা বক্তব্যের পর এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষ্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের দিন (৫ আগস্ট) রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে আহত ও মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে যাওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। ২৮ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক এবং এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। এই মামলায় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, প্রত্যক্ষদর্শীসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। পাশাপাশি অডিও, ভিডিও, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, জব্দ করা গুলি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।

আজ ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলে গতকাল ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের জানান প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তিনি বলেন, প্রসিকিউশন দাবি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করেছে। শুধু তা-ই নয়, এই আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ভিকটিম, শহীদ, আহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্যও প্রার্থনা করা হয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। দেশে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবিতে কয়েক মাস আগে ভারতের কলকাতায় আসাদুজ্জামান খান কামালকে দেখা গেছে। তবে বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে থাকা অন্য মামলার বিষয়ে প্রসিকিউটর তামিম বলেন, এই মামলায় যে পাঁচটি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হচ্ছে, সেই পাঁচটি অভিযোগে অন্য কোথাও কোনো মামলা করা যাবে না। যদি মামলা থাকে, সেটা আর চলবে না। কারণ, একই অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে দুবার শাস্তি দেওয়া বা দুবার বিচার করা যাবে না। শেখ হাসিনা নারী হওয়ায় বিশেষ সুবিধা পাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিআরপিসিতে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ, শিশুদের প্রিভিলেজ দেওয়া আছে। কিন্তু রায়ের ক্ষেত্রে নারীকে কোনো প্রিভিলেজ দেওয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আইনেও কোনো প্রিভিলেজ নেই। রায়ে আসামির অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে শাস্তি দেওয়া হবে।

রায়-পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই প্রসিকিউটর বলেন, রায় দেওয়ার পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। পলাতক আসামির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী আপিল করতে পারবেন না। তবে আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার বা আত্মসমর্পণ করার পর আপিল করতে পারবেন, যদি আপিল বিভাগ বিলম্ব মার্জনা করেন। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছিল। রায়ে শাস্তি হলে তাঁরা আরেকটি কনভিকশন ওয়ারেন্টের আবেদন ইন্টারপোলে পাঠাবেন তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য।

আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শনিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে সেনাসদরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সূত্র আজকের পত্রিকাকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ নভেম্বর সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

গুম-নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় কয়েক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ কয়েকটি মামলার তদন্ত চলছে। ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অসংখ্য মামলা রয়েছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৪ বছরে দুই ট্রাইব্যুনাল মোট ৫৫টি রায় দেন। ২০২৩ সালের ১৩ জুন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার অবসরে গেলে বিচারকাজ বন্ধ ছিল। গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং ৩০ হাজার মানুষের আহত হওয়ার ঘটনার বিচার করতে গত বছরের ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে তিনজনকে নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে শুরু হয় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম। পরবর্তীকালে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়।

মনোনয়নপত্র নিলেন ৩১৪৪ জন, আগামীকালই দাখিলের শেষ সময়

আগামী মঙ্গলবার অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

আজ রাতে চাঁদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলে নৌযান চলাচল বন্ধ

৬ শিক্ষানবিশ এএসপিকে চাকরি থেকে অপসারণ

সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের ‘অতিরঞ্জিত’ মন্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

নির্বাচন সামনে রেখে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয় পরিদর্শন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা

মনোনয়নপত্রে সন্তানের আয়ের তথ্য দেওয়া ঐচ্ছিক—বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর ইসির চিঠি

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা