ডাল খেতে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের অনেকে খাদ্যতালিকায় মুগ ডাল রাখেন। মানুষের এই পছন্দের ডাল নিয়ে শুরু হয়েছে ভয়ংকর প্রতারণা। বাজারে মুগ ডালের নামে যা বিক্রি হচ্ছে, তার বড় একটি অংশ ‘মথবীজ’। বিদেশ থেকে আমদানি করা মথবীজে রং মিশিয়ে মুগ ডাল নামে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় বাজারে মুগ ডাল নামে বিক্রি করা হচ্ছে, এ ধরনের ৩৩টি ডালের নমুনা সম্প্রতি দৈবচয়নের ভিত্তিতে সংগ্রহ করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক পরীক্ষায় এসব নমুনা ডালের ১৮টির মধ্যে হলুদ রঙের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। রংমিশ্রিত ডালের একটি নমুনা বিএসটিআইয়ের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হলে সেখানে টারট্রাজিন রং পাওয়া যায়। টারট্রাজিন নামক এই রঙের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ। এ কারণে রং মেশানো মথবীজ কেনার বিষয়ে সতর্ক করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন বলেন, টারট্রাজিন বা হালকা হলুদ রং বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে ২০০ পিপিএম পর্যন্ত। কিন্তু এসব রং কাঁচা পণ্যে ব্যবহারের সুযোগ নেই। এসব রং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে ক্যানসার, লিভার ও কিডনির জটিল রোগ হতে পারে।
সেই সঙ্গে মুগ ডাল ও মথবীজ আমদানির ক্ষেত্রে রং পরীক্ষা নিশ্চিত- করণ এবং রংমিশ্রিত ডাল আমদানি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, রং মেশানো মথ বীজ আমদানি বন্ধ চেয়ে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যাঁরা এসব আমদানি করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে প্রকৃত মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা দরে।
অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি করা দেখতে অনেকটাই মুগ ডালের মতো ‘মথ বীজ’ হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। সাধারণ মানুষ তো দূরে থাক, বিচক্ষণ ব্যক্তিরাও এসব ডালের পার্থক্য বুঝতে পারেন না। এ সুযোগ নিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। মুগ ডাল নামে মথ বীজ বিক্রি করে আসছেন তাঁরা।
পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ ডালপট্টির মেসার্স এস আলম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলী আজগর জানান, বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা মুগ ডালসদৃশ এসব ডাল প্রতি কেজি ১২০-১৩০ টাকা দরে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বিকাশ চন্দ্র সাহা বলেন, ভারতের ব্যবসায়ীরা এই দেশের কৃষককে শেষ করে ফেলছে। অসাধু কিছু ব্যবসায়ী মথ বীজ আমদানি করে তাতে রং মিশিয়ে মুগ ডাল নামে বিক্রি করছেন।
বাজারে কী পরিমাণ ভেজাল মুগ ডাল আছে, সে সম্পর্কে ধারণা পেতে বাংলাদেশে ডাল আমদানির বিষয়ে অ্যাসাইকুডা অনলাইন ডেটা পর্যালোচনা করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছরে এইচএস কোড-০৭১৩৯৯০, ০৭১৩৩৯১০, ০৭১৩৩১৯০ এবং ০৭১৩৯০৯০-এর আওতায় মুগ ডাল আমদানির পরিমাণ ছিল অনুমান ১০ হাজার ৯৬১ টন। অন্যদিকে এইচএস কোড-০৭১৩৯০৯০-এর আওতায় মথ বীজ আমদানির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৮৯১ টন। মুগ ডালের তুলনায় মথ বীজ আমদানির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হলেও ৩৩টি নমুনা সংগ্রহের সময় বাজারে মথ নামে ডাল পায়নি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শিবির বিচিত্র বড়ুয়া বলেন, ডালের নামে ক্ষতিকর খাদ্যপণ্য আমদানির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও খবর পড়ুন: