গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গণমানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিজেদের অর্থায়নে করতে পেরেছি। ঠিক এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হবে না। কারও কাছে হাত পেতে চলবে না। দেশের জনগণকে আমি স্যালুট করি।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মানুষের সেবা করা, এটা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব ও কর্তব্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ঝড় বৃষ্টি, বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব সময় দেশের মানুষের পাশে আছে। সরকারে থাকি আর বিরোধী দলে থাকি—যখনই বাংলার মানুষ কোনো সমস্যায় পড়েছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সহযোগিতা করেছে। এবারের সিলেট সুনামগঞ্জের বন্যায়ও সবার আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী গেছে। তাদের সাহায্য করেছে। এটা আমাদের আদর্শ। এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।’
বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের সেবা করার অধিকার পেয়েছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আজকে ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিজেদের অর্থায়নে করতে পেরেছি। সেটাও গণমানুষের সমর্থন নিয়ে আমরা করেছি। ঠিক এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হবে না। কারও কাছে হাত পেতে চলবে না। চলবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে। বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট করি। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে আমি ফিরে এসেছিলাম। আওয়ামী লীগ আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করেছিল। পাশাপাশি জনগণের আশ্রয়েই আমি এসেছিলাম। তাদের মাঝে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম আমার হারানো বাবা-মায়ের স্নেহ। হারানো ভাইয়ের স্নেহ। কাজেই এ দেশের মানুষের জন্য যেকোনো আত্মত্যাগে আমি সব সময় প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাভাষায় কথা বলা, আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশ, আজ উন্নয়নশীল দেশ। আওয়ামী লীগ অর্থ বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা।’
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির সাত মাসের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে একটি বৈরী মনোভাব দেখা যায়। বাংলাভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টাসহ আর্থসামাজিকভাবে আমাদের শোষণ, নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণেরেই সংগঠন। আওয়ামী লীগ সব সময়ই এ দেশের শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। কত পরিবার কষ্ট পেয়েছে। কত মানুষ আত্মত্যাগ করেছে।’
বাংলাদেশ সৃষ্টিলগ্ন থেকে সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘পাকিস্তান নামক দেশটি যেভাবে আমাদের শোষণ করে যাচ্ছিল। ২৩ বছরের সংগ্রাম ও জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশ নামটিও বঙ্গবন্ধুর দেওয়া।’
সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুল ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ২১০০ সালের ডেলটা প্ল্যান করে দিয়েছি। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ যাতে হয় সেই পরিকল্পনাও তৈরি করে দিয়েছি। এই ধারাবাহিকতা নিয়ে দেশ চলতে থাকলে তাহলে এ দেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। রুখতে পারবে না।’