বাংলাদেশের মূল সংবিধান এবং পরে সংশোধনীর মাধ্যমে জাতি ও জাতীয়তাকে সংজ্ঞায়িত করে রাজনীতি ও সমাজে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার এই সেমিনারে বক্তব্য দেবেন ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
সেমিনারের বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘সংবিধান, সাংবিধানিক উপাদান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় গঠিত’ (Constitutions, Constituents, and the Constituted in South Asia)’ শিরোনামে সেমিনারটির আয়োজন করেছেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ডোনাল্ড ডেভিস।
সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান মূল সংবিধান এবং পরে সংশোধনীগুলোর মাধ্যমে জাতি ও জাতীয়তাকে সংজ্ঞায়িত ও পুনঃসংজ্ঞায়িত করেছে এবং কীভাবে এটি রাজনীতি ও সমাজে একটি বিভেদ রেখা তৈরি করেছে, তা নিয়ে আলোচনা হবে।
স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার পরিচিতি হিসেবে জাতীয়তাকে ‘বাঙালি’ বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয় ওয়েবসাইটে। গণপরিষদের বিতর্কে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগত বাঙালি সদস্যরা আদিবাসী অবাঙালি জনগণের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয়তার সংজ্ঞা চাওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেন।
১৯৭৮ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধান সংশোধন করে নাগরিকদের জাতীয়তা পুনঃসংজ্ঞায়িত করা হয়। সংশোধিত সংস্করণটি পরে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। নাগরিকদের জাতীয়তাকে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যা জাতীয়তার জাতিগত উপাদানকে আঞ্চলিকতার চিহ্নিতকারী হিসেবে প্রতিস্থাপিত করে।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান ২০১১ সালে এক সংশোধনীর মাধ্যমে ‘বাঙালি’ ও ‘বাংলাদেশি’কে একত্র করার চেষ্টা করে। সেখানে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতিগতভাবে বাঙালি হিসেবে পরিচিত হবেন এবং বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হইবেন।’ কিন্তু এই শর্তটি সুস্পষ্টভাবে জাতিগত পরিচিতিকে প্রাধান্য দিয়েছে বলে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়।
অধ্যাপক রীয়াজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালনের পর পেশাগত কাজে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। ১৮ নভেম্বর তাঁর দেশে ফেরার কথা।