বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) দায়িত্ব পালনকালে বেআইনি সিদ্ধান্তের জেরে রাষ্ট্রের ৯ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে বিটিআরসির সাবেক তিন চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের নামে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থার মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে কমিশন মামলার অনুমোদন দিয়েছে। বিটিআরসির সাবেক কর্মকর্তাদের বেআইনি সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্রের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। তদন্তে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস, শাহজাহান মাহমুদ ও মো. জহুরুল হক; বিটিআরসির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান, বিটিআরসির সাবেক কমিশনার মো. রেজাউল কাদের ও মো. আমিনুল হাসান।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকাকালে এসব কর্মকর্তা সরকারের অনুমোদন ছাড়া এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও গাইডলাইন লঙ্ঘন করে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (IGW) অপারেটরদের আর্থিকভাবে লাভবান করার উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
দুদক বলছে, পরীক্ষামূলকভাবে এক বছরের জন্য নির্ধারিত আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের টার্মিনেশন রেট ০.০৩ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ০.০১৫ ডলার করা হয়। একই সঙ্গে বিটিআরসির রেভিনিউ শেয়ার ৫১ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ এবং IGW অপারেটরদের শেয়ার ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। পরীক্ষামূলক এক বছর পর এই হার বহাল রাখার কোনো অনুমোদন না থাকলেও তা বেআইনিভাবে ২৮ মাস ধরে কার্যকর রাখা হয়।
এই অনিয়মের ফলে রেভিনিউ শেয়ারে ৩৮৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। কম রেটে কল আনায় ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৯৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে ৭২ লাখ ১০ হাজার ৯৬৯ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার বেশি ক্ষতিসহ সব মিলিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১০ কোটি ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
রাষ্ট্রের এই বিপুল ক্ষতি, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪১৮ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭–এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা করার অনুমোদন দেওয়া হলো।