দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ এবং পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার ভোরে ঢাকার ধামরাই, গাজীপুরের শ্রীপুর, লক্ষ্মীপুর এবং ময়মনসিংহে এসব ঘটনা ঘটে। এত অন্তত দুটি বাস এবং একটি ট্রেনের বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাসে আগুন দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল ভোরে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের এমসি বাজার এলাকার সুফিয়া টেক্সটাইল মিলের পাশে এই ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমন একটি ভিডিও আমরা দেখছি। এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারিনি। শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ইটেরপোল এলাকায় মেরামতের জন্য গ্যারেজে রাখা নিপু পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার ভোর ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আগুনে বাসটির বড় ধরনের ক্ষতি হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় গ্যারেজের মালিক দিদারসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
গাড়ির মালিক মোস্তাফিজুর রহমান স্বপন কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গাড়িটা কয়েক দিন ধরে দিদারের গ্যারেজে মেরামতের কাজ চলছিল। ভোরে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে সব ছাই করে দিল। যন্ত্রাংশসহ বাসের প্রায় ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। মেরামতের জন্য আমি দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আগুনে মোট প্রায় ১৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘এই গাড়িটাই ছিল আমার সংসার চালানোর একমাত্র উপায়। গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলতাম। সব স্বপ্ন মুহূর্তে শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি পথে বসার উপক্রম। এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে আমি হতবাক। আমি ন্যায়বিচার চাই।’
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, বাসে আগুন দেওয়ার পেছনে কারা জড়িত এবং ঘটনাটি পরিকল্পিত নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাসটি উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের ওয়াশপিটে দাঁড়িয়ে থাকা ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনার জারিয়াগামী লোকাল ট্রেনের বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই দ্রুততার সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। বুধবার ভোর ৪টার দিকে আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটে।
আগুন নেভানোর পর দেখা গেছে, একটি বগির কয়েকটি সিটের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে এবং অন্যান্য আরও কয়েকটি সিটে গানপাউডার-জাতীয় মিশ্রণ ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। এগুলোতে পেট্রল-জাতীয় তরল পদার্থ ঢালা হয়েছিল, যেন দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর তাৎক্ষণিক সাহসী ভূমিকার ফলে সেই অপচেষ্টা নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ময়মনসিংহ জংশন রেলস্টেশনের ট্রেন চলাচল এবং সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে জানান স্টেশন সুপার আব্দুল্লাহ আল হারুন।
আগুনের বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ময়মনসিংহ কার্যালয়ের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম জানান, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের বাইরের অংশে জারিয়া লোকাল ট্রেনের কোচগুলো ধোয়ামোছা করার জন্য ওয়াশপিটে দাঁড় করানো ছিল। সেখানে এমনিতেই রাতে অনেক অন্ধকার থাকে। এই সুযোগে নাশকতার উদ্দেশ্যে ভোরে একদল দুর্বৃত্ত অপকৌশলে গানপাউডার এবং পেট্রল দিয়ে ট্রেনে আগুন দেয়। তিনি জানান, আগুন জ্বলতে শুরু করলে নিরাপত্তা বাহিনীর তিন সদস্য দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করে এবং কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা এক দুর্বৃত্তকে ধাওয়া দেয়। তবে অন্ধকার থাকায় দৌড়ে তাকে ধরা সম্ভব হয়নি। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত পানি ছিটিয়ে আগুন নেভায়। এই ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকার ধামরাইয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সুয়াপুর শাখা লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোরে সুয়াপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
ধামরাই থানার পুলিশ জানায়, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে দুর্বৃত্তরা একটি মোটরসাইকেলে করে এসে প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা অফিসটিতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে আগুন দিতে না পেরে ব্যাংকের শাখা লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। বোমাটি ব্যাংকের পাশের একটি দোকানের টিনের চালের ওপরে গিয়ে পড়ে আগুন ধরে যায়। পরে লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
ধামরাই থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সুয়াপুর শাখায় দুর্বৃত্তরা বুধবার ভোরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। পরে একটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়, যা পাশের দোকানের চালে গিয়ে পড়ে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ওসি বলেন, ধামরাই থানা এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংকের ছয়টি শাখা রয়েছে। স্থানীয় গ্রাম পুলিশকে শাখাগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকেও টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।