হোম > জীবনধারা > ভ্রমণ

যে ৭ কারণে বয়স্ক ও তরুণদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় তফাত থাকে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 

জেনারেশন জেড ও বেবি বুমার্স প্রজন্মের ভ্রমণ রীতি ভিন্ন রকম। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

বয়স্করা যেমন ‘আজকালকার ছেলেমেয়েরা যে কী করে, বুঝি না’ বলতে পছন্দ করেন, তেমনই ‘আজকালকার ছেলেমেয়েরা’ও বয়স্কদের নিয়ে একই কথা বলে। এ যেন ইটের বদলে পাটকেল দশা। সব ক্ষেত্রের মতো ভ্রমণের দুনিয়াতেও এমন মানসিকতা আছে দুই প্রজন্মের মানুষের। তাই ভ্রমণ রীতিতে প্রজন্মগত একটা ফারাক তৈরি হয়েছে স্বাভাবিকভাবে। মিলেনিয়াল ও জেন-জি প্রজন্মের মানুষ যেভাবে ছুটি কাটান, তা দেখে তাঁদের বাবা-মা বা দাদু-দিদাদের মতো পুরোনো প্রজন্ম অর্থাৎ বুমার্স পর্যটকেরাও হতবাক হন। নতুন প্রযুক্তি, কাজের ধরন এবং জীবনের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আসায় বিশ্বজুড়ে পর্যটনের ধারণাটাই পাল্টে গেছে।

নতুন প্রযুক্তি এবং যুগের চাহিদা অনুযায়ী মিলেনিয়াল ও জেন-জি প্রজন্ম ভ্রমণের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছে। তাদের এই নতুন অভ্যাসগুলো হয়তো পুরোনোদের কাছে অচেনা বা কিছুটা অযৌক্তিক। তবে এর মাধ্যমেই বিশ্বজুড়ে পর্যটনের নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে। ভ্রমণ বিশেষজ্ঞরা সাতটি ভ্রমণ অভ্যাসের কথা বলেছেন, যেগুলো প্রবীণেরা বুঝতে পারছেন না। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম সেভাবে ভাবতে শুরু করেছে। দেখে নেওয়া যাক প্রজন্মগত ফারাকের এই সাতটি বিষয়।

প্রজন্ম প্রাতিষ্ঠানিক ব্র্যান্ডের চেয়ে ক্রাউডসোর্সড রিভিউ এবং অনলাইন কমিউনিটি রেটিংয়ের ওপর বেশি বিশ্বাস রাখে। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস

ব্র্যান্ড নয়, রিভিউ-ই ভরসা

বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম অ্যাপনির্ভর আবাসন বুকিংয়ে বিশ্বাসী। পুরোনো প্রজন্মের ভ্রমণকারীরা সাধারণত নামি হোটেল চেইন বা বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা রাখেন। কিন্তু বুমার্স ও মিলেনিয়ালরা বছরের পর বছর ধরে একই হলিডে ইন চেইন-এ বুক করতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন। অন্যদিকে, জেন জি প্রজন্ম দ্বিধাহীনভাবে অপরিচিত অ্যাপভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে একটি বাড়তি ঘর, অদ্ভুত ট্রি হাউস বা ছোট রুম বুক করে ফেলে। তাদের কাছে ভালো রিভিউ এবং বিশ্বাসযোগ্য ছবিই যথেষ্ট। কেন এই পরিবর্তন? কারণ, এই প্রজন্ম প্রাতিষ্ঠানিক ব্র্যান্ডের চেয়ে ক্রাউডসোর্সড রিভিউ এবং অনলাইন কমিউনিটি রেটিংয়ের ওপর বেশি বিশ্বাস রাখে। প্রযুক্তির প্রতি তাদের এই সহজাত আস্থা ভ্রমণের ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয়।

গন্তব্যে পৌঁছে সিদ্ধান্ত

প্রবীণ পর্যটকেরা সাধারণত বিস্তারিত ভ্রমণসূচি, প্রিন্ট করা কনফারমেশন এবং প্রতি মুহূর্তের জন্য নির্ধারিত কার্যকলাপ নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছায়। কিন্তু তরুণদের সূত্র হলো কম পরিকল্পনা, বেশি স্বতঃস্ফূর্ততা। তরুণ ভ্রমণকারীরা হয়তো শুধু প্রথম রাতের থাকার জায়গাটি বুক করে একটি নতুন দেশে পা রাখে। তাদের কাছে নমনীয়তা মানে অপ্রত্যাশিত সুযোগ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সম্ভাবনা, যা কঠোর পরিকল্পনায় বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এর প্রধান কারণ, এই প্রজন্ম দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত। তারা মনে করে, সবকিছু আগে থেকে ঠিক করে রাখলে অনেক দারুণ মুহূর্ত এবং আবিষ্কারের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

তরুণদের সূত্র হলো কম পরিকল্পনা, বেশি স্বতঃস্ফূর্ততা। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস

যখন ছুটি মানে বিচ্ছিন্নতা নয়

তরুণ প্রজন্ম কাজ ও ভ্রমণ একসঙ্গে করতে ভালোবাসে। রিমোট কাজের সংস্কৃতি এই পরিবর্তনের মূল কারণ। পুরোনো প্রজন্মের কাছে ছুটি মানে অফিস থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা। কিন্তু মিলেনিয়ালদের জন্য ওয়ার্কেশন বা কাজ করতে করতে ভ্রমণ করা সম্ভব। অন্যদিকে বুমার্স কিংবা মিলেনিয়ালদের কাছে ছুটি মানে ‘ছুটি’ অর্থাৎ কাজ না করা। প্রযুক্তিনির্ভর এই কাজের ধরনে মিলেনিয়ালরা এক বছরে মাত্র দুই সপ্তাহ ছুটি কাটানোর পরিবর্তে, ল্যাপটপ নিয়ে দূর থেকেও কাজ করে। ফলে তারা দীর্ঘদিন বিদেশে থাকতে পারে। এটি তাদের কাছে অবকাশ ও কাজের এক নতুন ভারসাম্য তৈরি করেছে।

স্ট্রিট ফুড বিপদ নয়, সংস্কৃতির অনুষঙ্গ

বয়স্ক ভ্রমণকারীরা অপরিচিত রাস্তার বিক্রেতার কাছ থেকে খাবার কেনাকে খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করতে পারেন। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম রাস্তার খাবারের দোকানগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখে। তারা অবশ্য পুরোপুরি ঝুঁকি নেয় না। সন্দেহজনক উৎস থেকে খাবার খাওয়ার আগে তারা রিভিউ দেখে বা পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখে। তরুণেরা স্থানীয় সংস্কৃতি এবং আসল খাবারের স্বাদ অনুভব করতে চায়। তারা মনে করে, রাস্তার খাবার এড়িয়ে গেলে অসাধারণ রন্ধন অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হতে হবে।

জেন জি পর্যটকদের কাছে স্ট্রিট ফুড বিপদ নয়, সংস্কৃতির অনুষঙ্গ। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস

ইনস্টাগ্রাম-উপযোগী মুহূর্তগুলোকে অগ্রাধিকার

মিলেনিয়ালরা রঙিন রাস্তা, সুন্দর ক্যাফে বা নিখুঁতভাবে সাজানো খাবারের ছবি তোলে। এগুলো শুধু স্মৃতি হিসেবে নয়, বরং অনলাইনে গল্প বলার জন্যও তারা ব্যবহার করে। প্রবীণেরা এটিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করলেও অনেকে মনে করেন, ডিজিটাল শেয়ারিং হলো ভ্রমণকে নথিভুক্ত করার আধুনিক উপায়। এটি ফিজিক্যাল ফটো অ্যালবামের জায়গা দখল করে নিয়েছে, যেখানে দ্রুত ও সহজে সবার প্রবেশাধিকার আছে। অনলাইনে নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা এই প্রজন্মের একটি স্বাভাবিক অভ্যাস। তাদের কাছে ভ্রমণের মুহূর্তগুলো কেবল ব্যক্তিগত স্মৃতি নয়, একটি ডিজিটাল লাইফ অ্যালবামের অংশ।

স্যুভেনিরের চেয়ে অভিজ্ঞতা গুরুত্ব

প্রবীণেরা সাধারণত ফ্রিজ ম্যাগনেট বা শট গ্লাসের মতো স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে আসেন। এগুলো তাঁদের কাছে ভ্রমণের প্রমাণ। কিন্তু মিলেনিয়ালরা হাইকিং ট্যুর, রান্নার ক্লাস বা বিভিন্ন কার্যকলাপের মতো অভিজ্ঞতার জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করে। তারা বস্তুগত স্যুভেনিরের দিকে কম গুরুত্ব দেয়। তরুণ প্রজন্ম ঘন ঘন বাসস্থান পরিবর্তন করে। তাদের কাছে জিনিসপত্র জমানো মানে স্থানান্তরে অসুবিধা। তাই তারা বস্তুর চেয়ে স্মৃতি বা অভিজ্ঞতাকেই বেশি মূল্যবান মনে করে।

নিজেকে খোঁজার যাত্রা

তরুণ প্রজন্ম ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য ভ্রমণ করে। কিন্তু বয়স্ক বাবা-মায়েদের কাছে বিভ্রান্তিকর হলো আত্ম-আবিষ্কার ও ব্যক্তিগত বিকাশের হাতিয়ার হিসেবে ভ্রমণকে বেছে নেওয়া। তরুণ প্রজন্ম ভ্রমণকে শুধু অবসর বা বিনোদন হিসেবে দেখে না, বরং আবেগীয় ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। তারা একা ভ্রমণ করে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে, নতুন করে শুরু করতে বা জীবনের নতুন পরিপ্রেক্ষিত লাভ করতে চায়।

সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার

কেমন দেখতে চাই দেশের পর্যটনশিল্প

২০২৬ সালে ভ্রমণে যেসব ট্রেন্ড থাকবে

ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোন দেশ ব্যয়বহুল, সাশ্রয়ীর তালিকায় রয়েছে কারা

সেরা দশের শীর্ষে ব্যাংকক, তলানিতে কে?

স্বল্প খরচে নেপাল ভ্রমণের ১১ পরামর্শ

নেপালের মহাপরিকল্পনায় এভারেস্ট রক্ষা পাবে তো?

উত্তরের হিম রাজ্যে তুষারবিলাসের রোমাঞ্চ, হিমাঙ্কের নিচে তপ্ত রাত

গ্রামের নাম মহিষখোলা

মাধবকুণ্ড ঝরনার পানিতে বিরল ঝরনাপাখি

বাংলাদেশের পর্যটক কমায় ভারতে নিম্নমুখী আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর সংখ্যা