পরিবার নিয়ে ভ্রমণ অনেকের কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ। শিশুরা সঙ্গে থাকলে মা-বাবারা সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেন। এ নিয়মগুলো মানলে ভ্রমণ উপভোগ্য ও নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব বলে মনে করেন অভিভাবকেরা। কিন্তু কখনো কখনো সে সব না মানলেও ভ্রমণ উপভোগ্য করে তোলা সম্ভব।
মার্কিন ভ্রমণ লেখক জেমি ডেভিস স্মিথ। তাঁর দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ইতিমধ্যে ২৪টি দেশ ঘুরেছেন। শিশুদের নিয়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে গতানুগতিক কিছু ধারণা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ‘বিজনেস ইনসাইডার’-এর জন্য লেখা এক নিবন্ধে ডেভিস স্মিথ তাঁর নিজস্ব ভ্রমণ দর্শন তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, অন্যদের পরামর্শ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে, প্রচলিত প্রথাগুলো ভেঙে নিজস্ব পথে চলাই শিশুদের সঙ্গে আনন্দময় ও চাপমুক্ত ভ্রমণের চাবিকাঠি। তাঁর অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে সে সব মা-বাবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক, যাঁরা ছোট থাকার কারণে শিশুদের ভ্রমণ থেকে বিরত রাখেন।
এক জায়গায়ই থাকবেন এমন নয়
শিশুদের নিয়ে ভ্রমণে গেলে সাধারণত একটি জায়গাতেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন অভিভাবকেরা। শিশুদের অভ্যাসের জন্য এক হোটেলে বা এয়ারবিএনবিতে দীর্ঘ সময় থাকাটা অনেক অভিভাবকের কাছে আদর্শ বলে মনে হয়। কিন্তু জেমির মতে, একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকার বাধ্যবাধকতা পরিহার করুন। তিনি এ রীতির বিরোধী। জেমি জানান, তাঁদের ইউরোপ সফরের মূল লক্ষ্য ছিল, সর্বাধিকসংখ্যক জায়গায় ঘোরা। তাই তাঁরা কয়েক দিন অন্তর থাকার জায়গা পরিবর্তন করেছেন। ফলে ভ্রমণটি আরও অনেক বেশি মজাদার ও বৈচিত্র্যময় হয়েছে। আপনি যদি কম সময়ে বেশি কিছু দেখতে চান, তবে ঘন ঘন জায়গা পরিবর্তন করার সাহস দেখান। শিশুদের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হওয়াও ভ্রমণের একটি অংশ।
দেরিতে শুরু, শান্তিতে শেষ
ভিড় এড়াতে বা দিনের আলো পুরোপুরি কাজে লাগাতে অনেকে ভোরে ওঠার পরামর্শ দেন। কিন্তু জেমি ডেভিস স্মিথ ছুটিকে ছুটির মতোই উপভোগ করতে চান। ভোরে ওঠার প্রথা এড়িয়ে চললেও সমস্যা নেই। জেমি লেখেন, ‘ছুটিতে থাকা অবস্থায় অ্যালার্ম ঘড়ির ওপর নির্ভর না করতে আমার ভালো লাগে।’ ভোরে ওঠার চাপ না থাকায় রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়ার তাড়া থাকে না। ফলে দিনের কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত করার প্রয়োজন হয় না। তাঁর পরিবার থিম পার্ক বা আকর্ষণীয় জায়গাগুলো থেকে সবচেয়ে শেষে বের হয়। তিনি দেখেছেন, বন্ধ হওয়ার আগের ঘণ্টাটায় ভিড় কমে যাওয়ায় আকর্ষণগুলো আরও শান্তভাবে উপভোগ করা যায়।
গন্তব্য নির্বাচনে বৈচিত্র্য আনুন
অনেক মা-বাবা কেবল তথাকথিত ‘শিশুবান্ধব’ বা ফ্যামিলি-ফ্রেন্ডলি জায়গাগুলোই বেছে নেন। ডেভিস স্মিথ তাঁর সন্তানদের শুধু বিনোদন নয়; বরং ইতিহাস ও সংস্কৃতিও দেখাতে চেয়েছেন। তিনি চান তাঁর সন্তানেরা বিশ্বের জটিল ইতিহাস সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করুক। তিনি তাঁর সন্তানদের পোল্যান্ডের আউশভিটস বির্কেলাউ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের স্থানে, জাপানের হিরোশিমায় এবং আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন। ভারত বা জর্ডানের মতো যেসব দেশ নিয়ে নিরাপত্তা বা স্বাস্থ্যগত সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল, সে সব দেশেও তাঁরা ভ্রমণ করেছেন। এমনকি কোনো সমস্যা ছাড়াই দারুণ সময় কাটিয়েছেন। নিরাপত্তা সতর্কতা নিয়ে বেশি চিন্তা না করে, নিজের পরিকল্পনা ও গবেষণার ওপর ভরসা রাখুন। এ ক্ষেত্রে ভ্রমণের আগে নিরাপত্তা নিয়ে একটি শক্ত গবেষণা করে আপনাকে ভ্রমণে বের হতে হবে।
অল্প জিনিস নিয়ে ভ্রমণ
শিশুদের জন্য আরাম নিশ্চিত করতে অনেকে ঘরোয়া আরামদায়ক জিনিসপত্র ও খেলনায় স্যুটকেস ভর্তি করে ফেলেন। কিন্তু ডেভিস স্মিথ না হলেই নয়, এমন জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী। বড় টেডি বিয়ার বা বিশাল খেলনার বদলে তিনি কেবল একটি ছোট জিনিস রাখেন, যা শিশুদের মানসিক নিরাপত্তা দেয়। তাঁর পরামর্শ হলো, অপ্রয়োজনীয় ভার বহন না করে, যা আছে তা দিয়েই মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। এতে লাগেজ বহন করার ঝামেলা কমে এবং ভ্রমণ আরও সহজ হয়।
নিজস্ব ভ্রমণ-দর্শন তৈরি করুন
ডেভিস স্মিথ স্বীকার করেন, তিনি ট্রাভেল ফোরামসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচুর গবেষণা করে শেষ পর্যন্ত তাঁর নিজস্ব পথ খুঁজে বের করেছেন। তারপরই তিনি প্রচলিত নিয়ম ভাঙার সাহস দেখান। সব মা-বাবার জন্য একই নিয়ম কার্যকর নাও হতে পারে। আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য ও আনন্দ এনে দেবে, এমন পদ্ধতিটি খুঁজে বের করুন। পূর্বনির্ধারিত নিয়ম বা শুনে আসা জ্ঞানের দাসত্ব না করে, নিজের পছন্দ অনুযায়ী ছুটি কাটানোর স্বাধীনতা উপভোগ করুন।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, ডেইলি মেইল