হোম > জীবনধারা > ভ্রমণ

চ্যাটজিপিটির পরামর্শে ফ্রান্সে নতুন জীবন শুরু মার্কিন নারীর

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 

চ্যাটজিপিটির পরামর্শে ফ্রান্সে নতুন জীবন শুরু করেছেন জুলি নিস। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ ফ্রান্সের ওসিতানি অঞ্চলের ছোট শহর ইউজেস। প্রতিদিন সকালে সেখানকার ঐতিহাসিক স্কয়ার প্লাস ও হার্বসের দিকে হাঁটতে গিয়ে এক কাপ কফি হাতে বসে থাকেন জুলি নিস। ফোয়ারার কলকল শব্দ ও মৃদু বাতাস সঙ্গী হয় সে সময়। এটিই এখন তাঁর প্রতিদিনের জীবন। কখনো বন্ধুদের সঙ্গে কফি হাতে আড্ডা। সব মিলিয়ে এক স্বপ্নের মতো দিন কাটছে তাঁর।

মিশিগানে জন্ম জুলির। বেড়ে ওঠা টেক্সাসে। ছয় মাস আগেও ইউজেস নামের শহরটি ছিল তাঁর কাছে অপরিচিত। অথচ এখন এই শহর তাঁর নতুন ঠিকানা। এই সিদ্ধান্ত নিতে তাঁকে সহযোগিতা করেছে চ্যাটজিপিটি।

জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল এআই

‘শুনতে পাগলামি লাগতে পারে, আমি তখন ভীষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম’, বলছিলেন জুলি নিস। ফ্রান্সের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছোটবেলা থেকেই। স্কুলে ফরাসি ভাষা শিখতেন। ২০০৪ সালে প্যারিসে চলে যান। সেখানে থাকেন টানা পাঁচ বছর। ১১ ও ১২ বছর বয়সে নেওয়া ওই সিদ্ধান্তটিই যেন পুরো জীবনকে অন্য এক পথ দেখিয়েছে।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে প্রযুক্তি খাতে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন নিস। ভালো বেতন, একের পর এক ইচ্ছেমতো ভ্রমণ—সবই ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েন। উদ্বেগ, বিষণ্নতা আর দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। নিস বলেন, ‘আমি নিজেকে খোলস ছাড়া মানুষ মনে করতাম।’

ফ্রান্সের ইউজেস শহরের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে জুলি। ছবি: সংগৃহীত

প্যারিস থেকে ছোট শহরে

ফ্রান্সের প্রতি টান জুলিকে আবার সেখানে নিয়ে যায়। করপোরেট চাকরি ছেড়ে প্যারিসে ফিরে যান তিনি। তবে শহরের ভিড়ে হাঁপিয়ে ওঠেন। তিনি ফ্রান্সেই থাকতে চান, কিন্তু কোথায়? তখনই তিনি সাহায্য নেন চ্যাটজিপিটির। নিজের পুরো ঘটনা, জীবনধারা, মূল্যবোধ আর চাওয়া-পাওয়ার তালিকা লিখে দেন চ্যাট বটে। এর সঙ্গে যোগ করেন নিরিবিলি শহর, ভালো আবহাওয়া, বাজার, আন্তর্জাতিক কমিউনিটি সবকিছু। উত্তরে এআই চ্যাট বট চ্যাটজিপিটি দুটি শহরের নাম জানিয়ে দেয় জুলিকে। তার একটির নাম সারলা-লা-কানেদা, অন্যটি ইউজেস।

কিছুটা নিরিবিলি হওয়ায়, চ্যাটজিপিটি জুলিকে ইউজেসে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। নিস বলেন, ‘আমি ভাবলাম, ঠিক আছে, এবার যাওয়া যাক।’

নতুন করে শুরু

সিদ্ধান্তের পরই পাসপোর্ট ট্যালেন্ট নামে একটি আবাসিক অনুমতি পান তিনি। এটি দক্ষ পেশাজীবীদের দেওয়া হয়। কয়েক মাস পর অনুমতি পেলে চাকরি ছাড়েন, গাড়ি বিক্রি করেন। দুটি স্যুটকেস আর একটি ব্যাগ নিয়ে রওনা দেন ফ্রান্সে। ইউজেসে তিনি ছোট একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেন। যেখানে জানালা দিয়ে দেখা যায় মধ্যযুগীয় একটি টাওয়ার। সেখানে যাওয়ার পরই শুরু হয় নতুন বন্ধুত্ব গড়া এবং স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা।

বর্তমানে ইউজেসে থেকে রিট্রিট ও ফুড ট্যুর আয়োজন করেন জুলি। ছবি: সংগৃহীত

একাকিত্বের ভয়, নতুন বন্ধুত্ব

জুলির ইউটিউব চ্যানেল তাঁকে অন্য প্রবাসীদের সঙ্গে পরিচিত করে দেয়। প্রথমে বেশির ভাগ অবসরপ্রাপ্ত মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। ধীরে ধীরে সমবয়সী লোকজনের সঙ্গেও গড়ে উঠতে থাকে বন্ধুত্ব। জুলি বলেন, ‘এখানে কেউ আপনাকে শুরুতেই জিজ্ঞেস করবে না, কী কাজ করেন। এটি আমার ভালো লেগেছে। কারণ, এই পরিচিতি এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।’

সীমাবদ্ধতা ও শান্তি

জুলি জানিয়েছেন, ইউজেসে জীবন তুলনামূলক সস্তা, কিন্তু আয় কম। স্থানীয়দের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ বেড়েছে। তবুও তিনি মনে করেন, এই জীবনই তাঁকে নিজের কাছে ফিরিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ‘আমি এখন পুরোপুরি নিজেকে ফিরে পেয়েছি। একসময় ভেবেছিলাম আর কখনো স্বাভাবিক হতে পারব না। এখন মনে হয়, আমি আবার জীবিত।’

নতুন পথের আনন্দ

বর্তমানে ইউজেসে থেকেই রিট্রিট ও ফুড ট্যুর আয়োজন করেন জুলি। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলেও নিয়মিত ভিডিও দেন। ভবিষ্যতে এখানেই ফ্ল্যাট কেনার চিন্তা করছেন তিনি। প্রতিবছর এক বা দুবার যুক্তরাষ্ট্রে যান। তবে স্থায়ীভাবে ফিরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তাঁর।

জুলি বলেন, ‘এই ছোট শহরটাই এখন নিজের জায়গা বলে মনে হয়। এখন এটাই আমার ঘর। চ্যাটজিপিটিকে জীবনের সিদ্ধান্ত দিতে দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ শোনাতে পারে। কিন্তু আমার জন্য এটা আশীর্বাদ ছিল।’

সূত্র: সিএনএন

২০২৬ সালের জন্য এয়ারবিএনবি-এর পূর্বাভাস

পর্যটকের স্রোতে বিপর্যস্ত শহর

বিমানযাত্রার অলিখিত নিয়মগুলো জেনে নিন

রহস্যময় আগুন পাহাড়

ভিয়েতনামের পর্যটনশিল্প পুনরুদ্ধারের গতি দ্রুত

চীনে বাড়ছে ঘোড়ায় চড়ে ছুটি কাটানোর প্রবণতা

এআই-নির্ভর ভ্রমণে শীর্ষে ভিয়েতনাম

আন্তর্জাতিক পর্যটনে শীর্ষে ব্যাংকক, আকর্ষণীয় শহর প্যারিস

জেনে নিন মালদ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময় কখন

নেপালের অদেখা জগৎ