ভ্রমণের সময় অনেকে সব প্রয়োজনীয় জিনিস একটি স্যুটকেসে গুছিয়ে ফেলতে চান। এতে প্যাকিং সহজ মনে হলেও বাস্তবে এমনটা না-ও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সব জিনিস এক ব্যাগে না রেখে আলাদা ব্যাগে ভাগ করে নেওয়াই ভ্রমণের জন্য বেশি নিরাপদ ও উপযোগী; বিশেষ করে ব্যস্ত পর্যটন মৌসুমে বিমানবন্দরে লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র স্যুটকেসটি হারিয়ে গেলে ভ্রমণ আনন্দের বদলে দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে।
কেন আলাদা ব্যাগে জিনিস রাখা জরুরি
যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দর শাটল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এসসিএস শফার্স ভ্রমণকারীদের পরামর্শ দিয়েছে, কাপড়, ওষুধ, চার্জারসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের জরুরি জিনিসগুলো একটি ব্যাগে না রেখে ছোট ব্যাগ বা একাধিক স্যুটকেসে ভাগ করে রাখা উচিত। এতে লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলেও পুরো ভ্রমণ পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। প্রতিষ্ঠানটির কমার্শিয়াল ডিরেক্টর হ্যাডলি ডায়মন্ড বলেন, ‘সব প্রয়োজনীয় জিনিস এক স্যুটকেসে গুছিয়ে রাখলে সেটি হারালে ভ্রমণকারীরা একসঙ্গে সবকিছু হারানোর ঝুঁকিতে পড়েন; বিশেষ করে পরিবার নিয়ে ভ্রমণ কিংবা সময়সূচিনির্ভর কোনো সফরে গেলে বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। প্রয়োজনীয় জিনিস আলাদা ব্যাগে ভাগ করে রাখলে যাত্রাপথে কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি হলেও ভ্রমণকারীরা নিজেদের পরিকল্পনা সহজে সামাল দিতে পারেন।’
কীভাবে প্যাক করবেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্রমণের আগে প্রথমে প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য জিনিসের একটি তালিকা তৈরি করা উচিত। এরপর সেগুলো গুরুত্ব অনুযায়ী ভাগ করে কিছু জিনিস চেকড ব্যাগেজে এবং কিছু ক্যারি-অন ব্যাগে রাখা নিরাপদ। পরিচয়পত্র, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং অন্তত এক সেট কাপড় ক্যারিঅন ব্যাগে রাখলে লাগেজ দেরিতে পৌঁছানো বা হারিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতেও ভ্রমণকারীরা সাময়িকভাবে সমস্যামুক্ত থাকতে পারেন। একই সঙ্গে অন্তর্বাস, চার্জিং ডিভাইসসহ ছোটখাটো প্রয়োজনীয় জিনিস আলাদা ছোট ব্যাগে গুছিয়ে রাখলে লাগেজের ভেতর জিনিস খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। বিভিন্ন রঙের প্যাকিং কিউব ব্যবহার করলে কাপড় ও আনুষঙ্গিক জিনিস আলাদা করে রাখা যায়, যা সময় ও ঝামেলা কমায়। গন্তব্যে পৌঁছে এসব কিউব সরাসরি হোটেলের ড্রয়ারে রেখে দিলেই দ্রুত গুছিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।
অতিরিক্ত জিনিস নেবেন না
যেসব জিনিস সঙ্গে নিতে ইচ্ছা থাকলেও ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য নয়, প্যাকিং শুরুর আগে সেগুলোর একটি আলাদা তালিকা করে নিন। এতে অপ্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়ার প্রবণতা কমে এবং লাগেজের ভারও নিয়ন্ত্রণে থাকে। পাশাপাশি যাত্রার ঠিক আগে প্রয়োজন হতে পারে এমন কিছু জিনিসের জন্য একটি শেষ মুহূর্তের তালিকা তৈরি করলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফেলে যাওয়ার ঝুঁকিও কমে।
অভিজ্ঞদের পরামর্শ
এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট লরেন গিলফয়েল পরামর্শ দেন, ভ্রমণে এমন পোশাক নিন, যা সহজে মেলানো যায়। যেমন গাঢ় রঙের প্যান্ট, সাদা বা নিরপেক্ষ রঙের টি-শার্ট এবং একটি ডেনিম জ্যাকেট। এগুলো বারবার পরা যায় এবং লাগেজও কম হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ও ভ্রমণবিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ববি লরি বলেন, ‘কাপড় ভাঁজ না করে রোল করে রাখলে জায়গা বাঁচে, এমনকি সঠিকভাবে করলে কম কুঁচকায়।’
পরিষ্কার ও নোংরা কাপড় আলাদা রাখুন
ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘স্কটস চিপ ফ্লাইট’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বিমান বিশেষজ্ঞ স্কট কিজ নোংরা কাপড়ের জন্য আলাদা ভাঁজযোগ্য ব্যাগ সঙ্গে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এতে পরিষ্কার কাপড় আলাদা থাকে এবং গুছিয়ে রাখা সহজ হয়।
লাগেজ হারালে খুঁজে পাওয়ার উপায়
লাগেজ হারিয়ে গেলে দ্রুত খুঁজে পেতে স্যুটকেসে নাম ও যোগাযোগের তথ্য লেখা স্টিকার বা নোট লাগিয়ে রাখা উচিত। পাশাপাশি অ্যাপল এয়ার ট্যাগ বা লাইফ৩৬০-এর টাইল-এর মতো ট্র্যাকিং ডিভাইস ব্যবহার করলে লাগেজের অবস্থান জানা সহজ হয়।
একটি স্যুটকেসে সবকিছু ভরে ফেলার চেয়ে জিনিসপত্র ভাগ করে রাখা ভ্রমণকে করে তোলে নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত। এ পদ্ধতি সামান্য পরিকল্পনাতেই আপনাকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার