হোম > জীবনধারা > ফিচার

পৃথিবীর একমাত্র মরিচ উৎসবে একদিন

মইনুল হাসান, ফ্রান্স  

ফ্রান্সের স্পোলেত গ্রামে অনুষ্ঠিত মরিচ মেলায় আসা দর্শক। ছবি: লেখক

ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমে একদম স্পেনের সীমান্ত ঘেঁষে পিরিনিজ পর্বতমালা। এই পর্বতমালার পাদদেশে দুই দেশ মিলিয়ে ছবির মতো বিশাল পাহাড়ি উপত্যকায় প্রাচীনকাল থেকে বসবাস বাস্ক জাতির মানুষেরা। নিজস্ব ভাষা, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক এ জাতির মানুষ নিজেদের বাস্ক হিসেবে পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করে।

বাস্ক তরুণী জুলি, তাঁর মরিচ ও মরিচের পণ্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। ছবি: লেখক।

একদিকে পর্বত, অন্যদিকে অতল অতলান্তিক মহাসাগরের বিশাল জলরাশির মিলে অপার্থিব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সবটুকু যেন এখানেই ঘনীভূত হয়েছে। এই অঞ্চলেই ফ্রান্সের বাইওন শহর থেকে ২২ কিলোমিটার বা ১৮ মাইল দূরে পর্বতের কোলে আছে নির্জন, নিভৃত ছোট্ট একটি গ্রাম—স্পোলেত।

প্রায় ৪০০ বছর ধরে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন, সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে জড়িয়ে আছে একটি বিশেষে জাতের মরিচ। ফরাসি ভাষায় এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘পিমো দ্য স্পোলেত’ অর্থাৎ স্পোলেতের মরিচ। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা এর একটি খটমটে নাম দিয়েছেন, তা হলো ক্যাপসিকাম অ্যানুয়াম, প্রকরণ গোরিয়া। ১৬ শতকে স্প্যানিশ পরিব্রাজক খুয়ান সেবাস্তিয়ান এলকানো মেক্সিকো থেকে এই মরিচ ইউরোপের নিয়ে আসেন। সেই ১৬৫০ থেকে এই অঞ্চলের কৃষকেরা পিমো দ্য স্পোলেত নামে এই মরিচ চাষ করতে শুরু করেন।

স্পোলেতের মরিচ। ছবি: লেখক।

উজ্জ্বল লাল রঙের, চমৎকার ঘ্রাণের, একটু মিষ্টি ও হালকা ঝালের এই বিশেষ জাতের মরিচ প্রথম দিকে শুধু ঔষধি এবং কাঁচা মাংস সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো। পরে গোলমরিচের অভাব পূরণে রান্না করা খাদ্যের স্বাদে আলাদা ব্যঞ্জনা আর ঝাঁজের জন্য ব্যবহার হতে শুরু করলে ফরাসি ও স্প্যানিশদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পিমো দ্য স্পোলেতকে ঘিরে গড়ে ওঠে আলাদা মাত্রার রন্ধনকৌলীন্য, এক সমৃদ্ধ ও সম্পূর্ণ ভিন্ন খাদ্যসংস্কৃতি। এই অঞ্চলের জীবন আবর্তিত হয় এই মরিচ ঘিরে। ফ্রান্স ও স্পেনের মানুষ এবং শেফদের খুব প্রিয় এই বিশেষ জাতের মসলা।

প্রতিবছর, অক্টোবরের শেষ শনি ও রোববার, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই ছোট্ট নির্জন গ্রামের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ভিড় করে বহু মানুষ। দূরদূরান্ত থেকে দেশ-বিদেশের মরিচপ্রেমীরা এখানে ভিড় করেন—বসে এক মহা মিলনমেলা। ৫৬ বছর ধরে, অর্থাৎ ১৯৬৯ সাল থেকে এমনটাই চলে আসছে। এমন জাঁকজমক আর জমজমাট আয়োজনের কেন্দ্রে আছে এই বিশেষ জাতের মরিচ।

মরিচের গয়না। ছবি: লেখক।

২৫ অক্টোবর শনিবার, সকাল থেকে স্পোলেত গ্রামে ভিড় বাড়তে থাকে। পাহাড়ি পথ ধরে সারি সারি গাড়ির বহর। বিশাল অঙ্গনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং চলাচলের সুবিধার জন্য সরকারি বাহিনীর সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকদের দল গলদঘর্ম হচ্ছে। তারপরেও তাদের মুখে হাসির ঝিলিক। আমরাও মিশে গেলাম বহু ভিনদেশির সঙ্গে। বাদকদের দল বাদ্য বাজিয়ে বিয়েবাড়ির আমেজ সৃষ্টি করছিল। বাস্ক তরুণ-তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী নাচে মুগ্ধ করছে আগতদের।

অনেকটা উঁচু এক বিশাল জায়গাজুড়ে স্পোলেতের মরিচ এবং মরিচজাত নানান পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন উৎপাদনকারীরা। হাসিমুখে উৎসুক দর্শনার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তাঁরা। দেখা হলো মসিয়ঁ পিয়ের ডিহার্চের সঙ্গে। তিনি এসেছেন স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে। বহু বছর ধরে তিনি এই মরিচের চাষ করেন এবং তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করেন নিজ হাতে। তিনি জানালেন, মোট ১০টি গ্রামে এই মরিচের চাষ হয়। ১৫০ জন কৃষক বছরে প্রায় ১০০ টন মরিচ উৎপাদন করেন। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফলন হয়। আরও বললেন, ভিটামিনের ভালো উৎস এই মরিচ হজমশক্তি বাড়ায়। ওজন কমাতে, বিপাকে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

মরিচ চাষি মসিয়ঁ পিয়ের ডিহার্চ। নিজের উৎপাদিত মরিচ নিয়ে জায়া ও পুত্র নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। ছবি: লেখক।

আমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল দুই মরিচকন্যার—ক্লারা ও রেবেকা। ছবি তুলতে চাইলে মিষ্টি হেসে রাজি হয়ে গেলেন। বাস্ক তরুণী জুলি, তাঁর মরিচ ও মরিচের পণ্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। অনেকের সঙ্গে দেখা হলো, আলাপ হলো। সবাই খুব আন্তরিক।

পরদিন রোববার একই রকম আয়োজন। শেষ হলো পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে। সেরা মরিচ উৎপাদনকারীকে পুরস্কারের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়।

উৎসবে মরিচকন্যা ক্লারা ও রেবেকা। ছবি: লেখক।

এ বছর, ২০২৫-এ মরিচের তীর্থে এসেছিলেন প্রায় ২৫ হাজার মরিচ ভোক্তা ও ভক্ত। এমন করেই প্রতিবছর মরিচের প্রার্থনাসংগীত দিয়ে শুরু হয় দুদিনব্যাপী জমজমাট উৎসবের। উদ্‌যাপিত হয় মরিচের রাজধানীতে পৃথিবীর একমাত্র মরিচ উৎসব।

এই ডিসেম্বরে যা কিছু করতে পারেন

ফুলে ফুলে রঙিন হোক বারান্দা

জেনে নিন, স্থায়ীভাবে কোন জায়গাগুলোর ওপর দিয়ে বিমান চলে না

ডিজনির রাজকুমারীরা: রূপকথার হাত ধরে প্রজন্মের শিক্ষা

হাওয়া বদল: সুস্থ থাকার ম্যাজিক দাওয়াই কি হারিয়ে গেল?

বিয়ে করলে নাগরিকত্ব পাবেন যেসব দেশের

ডলারের জন্ম যে শহরে

মন শান্ত রাখে ইনডোর প্ল্যান্ট

রুক্ষতা থেকে চুলকে বাঁচাবেন যেভাবে

বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ ড্যানিয়েল জ্যাকসনের দেশের নাম কী?