দীর্ঘ কাজের চাপ, শহরের ব্যস্ততা এবং প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার—সব মিলিয়ে আমাদের মানসিক চাপের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে। অনেক সময় বিষণ্নতা, উদ্বেগ বা কাজের চাপের কারণে আমরা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এর জন্য সময় বের করে মেডিটেশন বা মন শিথিল করার অনুশীলন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু সবার জন্য এটি করা সহজ নয়। তবে ঘর সবুজ করে গড়ে তোলা হতে পারে সহজ ও কার্যকর সমাধান।
ছোট সবুজ ঘরের বড় প্রভাব
ঘরে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখার অভ্যাস শুধু সাজসজ্জার বিষয় নয়। এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম থেকে উঠে বা দিনের শেষে ঘরে ফিরে চারপাশে সবুজ গাছপালার অস্তিত্ব থাকলে তা মনে প্রশান্তি দেবে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরে সবুজ গাছ রাখলে বিষণ্নতা ও উদ্বেগ কমে, মন প্রফুল্ল থাকে। তবে একাধিক গবেষক সতর্ক করেছেন, ঘরের সব জায়গা গাছ দিয়ে পূর্ণ করে ফেলা ঠিক নয়। গবেষণা বলছে, ঘরের ৬০ শতাংশের বেশি জায়গা যদি আসবাবপত্র ও গাছ দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়, তবে মানসিক চাপ কমার পরিবর্তে তা আরও বাড়তে পারে। তাই ঘরের আকার ও আসবাবের অবস্থান অনুযায়ী গাছ রাখা উচিত।
কতগুলো গাছ যথেষ্ট
গবেষকেরা বলছেন, একটি ঘরের জন্য বড়-ছোট মিলিয়ে ৩ থেকে ৪টি গাছ যথেষ্ট। ঘরের জানালা, বারান্দা বা পড়ার টেবিলের পাশে গাছ রাখলে তা দৃষ্টিনন্দন হওয়ার পাশাপাশি মানসিক চাপ কমায়। যদি ঘরে আসবাব অনেক থাকে, তবে গাছ রাখার সংখ্যায় সামঞ্জস্য রাখতে হবে, যাতে ঘরে অতিরিক্ত ভিড় না হয়। এ কাজ সহজ করার জন্য স্ট্যানফোর্ডের গবেষকেরা একটি সফটওয়্যারও তৈরি করেছেন, নাম নেচার ভিউ পোটেনশিয়াল। সফটওয়্যারটি ঘরের ত্রিমাত্রিক ছবি নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখায়, ঘরের কোন অংশে কতটা গাছ রাখা গেলে তা দৃষ্টিনন্দন হবে, আবার মানসিক চাপও কমাবে।
কোন গাছ মন ভালো রাখে
পিস লিলি
পিস লিলি খুব বেশি রোদ পছন্দ করে না এবং মাটি একটু ভেজা থাকলেই ভালো থাকে। সাদা ফুলের জন্য পরিচিত এই গাছ সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। প্রচুর অক্সিজেন উৎপন্ন হওয়ায় এটি শরীর ও মনের জন্যও উপকারী।
স্নেক প্ল্যান্ট
স্নেক প্ল্যান্ট বেশ জনপ্রিয়। ঘরের কোণে যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো আসে না, সেখানেও এটি ভালো থাকে। কম পানি ও কম আলোতেও স্নেক প্ল্যান্ট ঠিক থাকে। বাতাস থেকে আর্দ্রতা শুষে নেওয়ার ক্ষমতা এবং অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য এটি খুব উপকারী।
এরিকা পাম
এরিকা পামের বড় সবুজ পাতা মানসিক শান্তি এনে দেয়। এটি অনেক দিন বাঁচে। এ গাছের জন্য বিশেষ কোনো যত্নের প্রয়োজন নেই। গাছ যখন বড় হয়ে যায়, শুধু টব পরিবর্তন এবং পাতার নিচের অংশ ছেঁটে দেওয়াই যথেষ্ট। সপ্তাহে এক বা দুই দিন রোদ দেওয়া বা বারান্দায় রাখলে এ গাছ ভালো থাকে।
ল্যাভেন্ডার
ল্যাভেন্ডার গাছ বাড়িতে রাখলে তার মিষ্টি গন্ধ উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। এটি বেশি আলো পছন্দ করে। তাই জানালার কাছে রাখা ভালো। তবে বেশি পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মানসিক চাপ কমানোর ক্ষেত্রে ল্যাভেন্ডার খুবই কার্যকর।
গাছ রাখার সঠিক জায়গা
ঘরের কোন জায়গায় গাছ রাখা হচ্ছে, সেটি জরুরি। জানালা, বারান্দা বা পড়ার টেবিলের পাশে ছোট টবে গাছ রাখলে মন শান্ত থাকে এবং ঘরের পরিবেশও ভালো হয়। এর পাশাপাশি ঘরের বেশি জায়গা আসবাব বা গাছ দিয়ে ভরিয়ে না ফেলাই ভালো।
ঘরে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখা মানসিক শান্তি ও ইতিবাচক মনোভাবের জন্য ভালো। সঠিক জায়গায় সঠিকসংখ্যক গাছ নির্বাচিত গাছ দিয়ে ঘর সাজানো হলে তা মানসিক চাপ কমায়, বিষণ্নতা দূর করে এবং মন প্রফুল্ল করে তোলে। শুধু সাজসজ্জা নয়, ঘরের সবুজ আবহাওয়া আমাদের মনকেও ভালো রাখে।
সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট