হাত ও হাতের আঙুলের শুষ্কতা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। প্রতিবার হাত ধোয়ার পর ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করলেও কিছুক্ষণ পর শুষ্ক হয়ে উঠছে। আঙুলের দুই পাশ থেকে সাদা সাদা মরা চামড়া উঠছে। শীতে ত্বকের নানা সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে হাতের ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা ও রুক্ষতা। খসখসে, সাদাটে হয়ে যাওয়া হাত নিজেরও অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। আর্দ্রতার অভাবে হাত এমন শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে। কারও কারও আঙুলের ডগাও ফেটে যায়। তাই শীত আসার আগে থেকে নিয়ম করে হাত ময়শ্চারাইজ করতে হবে। পাশাপাশি আরও কয়েকটি উপায়ে যত্ন নেওয়া চাই।
শীতে হাতের ত্বকের যত্ন নেওয়ার কিছু উপায়
আমরা দিনে যতবার মুখের যত্ন নিই, ততবার হাতের যত্ন নিই না। তাই মুখ ও হাতের ত্বকের রঙে যেমন পার্থক্য চোখে পড়ে, তেমনি হাতের ত্বকও হারায় কোমলতা। শীত আসার আগে থেকে সঠিকভাবে যত্ন না নিলে হাতের ত্বক আরও বেশি রুক্ষ হয়ে ওঠে। হাতের রুক্ষতা দূর করতে পেট্রোলিয়াম জেলির সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। যতবার হাত ধোবেন, ততবারই এ মিশ্রণটি ব্যবহার করুন। এতে হাতের কোমলতা ফিরে আসবে। শারমিন কচি, রূপবিশেষজ্ঞ ও স্বত্বাধিকারী, বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ কেয়ার
বারবার হাত ধুতে মাইল্ড হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করুন
বাড়িতে শিশু থাকলে বা সব কাজ নিজ হাতে করলে বারবার হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুতে হয়। সে ক্ষেত্রে মাইল্ড হ্যান্ডওয়াশ বেছে নিন। জেনে রাখা ভালো, অ্যান্টিব্য়াকটেরিয়াল হ্যান্ডওয়াশ সারা দিনে প্রতিবারই হাত ধোয়ায় ব্যবহার করা উচিত নয়। এগুলোর মধ্যকার শক্তিশালী রাসায়নিক উপাদান হাতের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত করে খসখসে করে তোলে। চেষ্টা করুন হাত ধোয়ার জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে।
হাত ধোয়ার পর ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন
প্রতিবার হাত ধোয়ার পর ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। এতে করে হাতের ত্বক নরম ও কোমল থাকবে। হাতের তালু, আঙুলের ভাঁজ, নখের দুই পাশের অংশ অনেক সময় বেশি রুক্ষ থাকে। এ ছাড়া নখের দুই পাশের কোনাও অনেক সময় শক্ত হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে গ্লিসারিন ও পেট্রোলিয়াম জেলি একসঙ্গে মিশিয়ে এসব জায়গায় লাগান। নিয়মিত এটি ব্যবহার করলে হাতের ত্বক মসৃণ হবে।
বাসন মাজা ও কাপড় ধোয়ার আগে সুরক্ষাব্যবস্থা
যাঁরা ঘরের সব কাজ নিজে করেন, তাঁদের হাতের ত্বক বেশি খসখসে হয়ে ওঠে। বিশেষ করে পানির কাজ করলে হাতে রুক্ষতা দেখা দেয়। প্রতিবার বাসন মাজা ও কাপড় কাচার আগে হাতে ভালো করে নারকেল তেল মেখে তারপর কাজ করুন। এতে ত্বক পানি, সাবান ও ডিশওয়াশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
টোনার ব্যবহার করতে হবে হাতেও
মুখের মতো, হাতেও টোনার ব্যবহার করা উচিত। ঘরোয়া উপায়ে বাড়িতেই এ টোনার বানিয়ে নেওয়া যায়। শসার রসের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা কর্পূর মিশিয়ে হাতে ভালো করে ম্যাসাজ করে নিন। দিনে দুবার এই টোনার ব্যবহার করতে পারেন। কয়েক দিন ব্যবহারের পরই দেখবেন হাতের দাগছোপ উঠে গেছে। ত্বকেও ঔজ্জ্বল্য ফিরে এসেছে। এ ছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে হাতে গ্লিসারিন ও লেবুর রস মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। এটি ত্বক কোমল রাখতে সাহায্য করে। চাইলে দুই ভাগ পানির সঙ্গে এক ভাগ গোলাপজল ও এক ভাগ লেবুর রস মিশিয়ে একটি দ্রবণ তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে হাতের কোমলতা ও হারানো জেল্লা ফিরে আসবে।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না
গাড়ি বা রিকশায় থাকুন, জানালার কাচ ভেদ করে সূর্যের আলো সরাসরি কিন্তু হাতে এসে পড়ে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বক পুড়িয়ে দেয়। শীতের রোদ কম হলেও ত্বকের সংস্পর্শে এলে কালচে দাগছোপ পড়তে পারে। তাই বাসা থেকে বেরোনোর আগে মুখ, গলা ও ঘাড়ের মতো হাতেও সব সময় সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।
সপ্তাহে এক দিন প্যাক ব্যবহার করুন
হাতের ত্বক যদি অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, তাহলে কয়েক ফোঁটা মধু ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে হাতে ম্যাসাজ করে মিনিট ১৫ রেখে ধুয়ে নিন। কয়েক দিনের ব্যবহারে হাতের ত্বক কোমল ও মসৃণ হবে। এ ছাড়া শসা, টমেটো ও লেবুর রসের সঙ্গে চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে হাতে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। হাতের উজ্জ্বলতা তো ফিরবেই, হবে কোমলও। প্যাক তৈরির সময় না পেলে বাড়িতে টক দই থাকলে তা-ই দুই হাতে মেখে নিন। টক দইয়ের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে নিলে আরও উপকার পাবেন।