সামনেই বিয়ের মৌসুম। বছরের এই সময়ে অনেকের বাগ্দান হয়ে যায়। আজকাল বাগ্দান কোনো ঘরোয়া অনুষ্ঠান নয়; বিয়ের মতো বাগ্দানও ঘটা করে অনুষ্ঠিত হয়। জমকালো শাড়ি বা লেহেঙ্গার সঙ্গে সোনা-রুপার জড়োয়া গয়না পরতে ভালোবাসেন নারীরা। বিয়ের মতো বাগ্দানেও অনেকে এখন দুই হাত ভরে মেহেদি লাগান। মেহেদির রঙে যেন আঁকা হয় কনের বুকভরা স্বপ্ন। হাতের পাতায় ফুটে ওঠে ফুল, পাখি, লতাপাতা, ময়ূর, গাছ, কলকে, চরকা, ডট, বটপাতা, পানপাতা কিংবা মধুবনী নকশা। তবে মেহেদি দিয়ে নকশা করার আগে কিছু বিষয় মনে রাখা চাই, নয়তো সাজটা অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে।
হাতের ধরন বুঝে নকশা
মেহেদির রঙে হাত রাঙালেই হবে? নকশাও করতে হবে হাতের ধরন বুঝে। একেকজনের হাত একেকরকম। কারও হাতের তালু বেশ বড়; সেসব হাতে ভরাট নকশা সুন্দর দেখায়। আর যাঁদের হাতের তালু ছোট; সেসব হাতে লতাপাতার মতো লম্বা নকশায় মানায় বেশ। এ ক্ষেত্রে হাতের আঙুলে নকশা করার সময় ভাবনায় রাখতে হবে, সব আঙুলে নকশা আঁকবেন নাকি শুধু একটি বা দুটিতে আঁকবেন। এটা নির্ভর করবে নকশার ধরনের ওপর। যদি নকশার ধরন হাতের কবজির কোনা থেকে লম্বা হয়ে তর্জনীর দিকে উঠে যায়, তাহলে একটি আঙুলে ভরাট নকশায় ভালো লাগবে। অন্য আঙুলগুলোয় মেহেদি না পরলেও ভালো লাগবে। আর যদি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে খুব হালকা কোনো নকশা করতে হবে।
‘বাগ্দান উপলক্ষে মেহেদি পরার আগে অবশ্যই হাত ও পা ওয়াক্সিং, মেনিকিউর ও পেডিকিউর, ডি ট্যান ট্রিটমেন্ট করে নেওয়া প্রয়োজন। এতে হাত ও পা অনেক বেশি সুন্দর দেখাবে। মেহেদি লাগানোর পর এই কাজগুলো করতে গেলে নকশা নষ্ট হয়ে যাবে।’ শোভন সাহা কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী
মেহেদি যাচাই-বাছাই ও প্রয়োজনীয় কিছু কথা
মেহেদি কেনার জন্য চাই সতর্কতা। পাকা রঙের মেহেদি দেখার পাশাপাশি খেয়াল করতে হবে, তাতে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক আছে কি না। এ জন্য মেহেদির প্যাকেট ভালো করে পড়ে নিতে হবে। মেহেদি পরার আগে হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ময়শ্চারাইজ করে নিতে হবে। ময়শ্চারাইজ করার আধা ঘণ্টা পর মেহেদি দেওয়া যাবে। বলে রাখা ভালো, মেহেদি লাগানোর আগে নখে হালকা ট্রান্সপারেন্ট নেইলপলিশের কোটিং করতে পারেন; এতে মেহেদি দেওয়ার সময় নখে রং লাগার ঝুঁকি থাকবে না। কনের হাতে মেহেদির নকশা যেমন হোক না কেন, মেহেদি পরার আগে কিছু বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। যিনি মেহেদি পরাবেন, তাঁর কোলের ওপর কুশন ও তার ওপর টাওয়েল বা গামছা বিছিয়ে তার ওপর হাত রেখে মেহেদি পরাতে হবে। এতে অসতর্ক মুহূর্তে মেহেদি ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। মেহেদির টিউবের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে বা টিউবের মুখে বাড়তি মেহেদি চলে এলে মোছার জন্য হাতের কাছে পর্যাপ্ত টিস্যু রাখতে হবে। খোলামেলা আলোময় জায়গায় বসতে হবে মেহেদি পরাতে।
পায়ে মেহেদির নকশা করতে চাইলে
পায়ে পরার নকশা একটু ভিন্ন হয়। পায়ে আলতার মতো নকশা করা যেতে পারে। পায়ের চারদিকে লম্বা ধরনের বা লতাপাতার নকশা এঁকে মাঝ বরাবর মান্ডালার মতো গোলাকার নকশায় ভরিয়ে নিলে ভালো লাগবে। আবার হাতের নকশার সঙ্গে মিল রেখে পায়ের এক পাশ বা দুই পাশে পরলে ভালো লাগবে।
আগেই আর্টিস্ট বুকিং দিয়ে রাখুন
বাগ্দানে মেহেদি পরতে চাইলে আগেই আর্টিস্ট বুকিং দিয়ে রাখুন। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে মেহেদি আর্টিস্টদের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ছাড়াও হোম বিউটি সার্ভিস দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মেহেদি আর্টিস্ট বুক করে নিতে পারেন। বুক করার আগে তাঁর পোর্টফোলিও একটু যাচাই-বাছাই করে নেওয়া ভালো। সাধারণত পারলারে বা আর্টিস্টদের কাছে মেহেদি দিতে চাইলে বাজেট রাখতে হয় ৩ থেকে ৮ হাজার টাকা। পছন্দের আর্টিস্টের সঙ্গে আলাপ করে নকশা ও বাজেট আগে ঠিক করে নিলে সময় বাঁচবে।