ক্যালসিয়াম শুধু হাড় ও দাঁত শক্ত রাখে না, এটি হৃদ্যন্ত্র, পেশির নড়াচড়া এবং স্নায়ুর সংকেত পাঠানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক অন্তত এক হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার। তবে কিশোর-কিশোরী, মেনোপজোত্তর নারী এবং বয়স্কদের এর চেয়েও বেশি প্রয়োজন হয়।
যদিও দুধ, দই, পনির ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবার ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস, তবু অন্যান্য খাবারেও প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
বীজ জাতীয় খাবার
এই খাবারগুলো পুষ্টিগুণে ভরপুর। তিল, চিয়া, পপি ও সেলারি বীজে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। যেমন—এক টেবিল চামচ পপিতে প্রায় ১২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। চিয়া বীজে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হৃদ্যন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
ফর্টিফায়েড পানীয়
এ ধরনের পানীয়তে ক্যালসিয়াম বা অন্যান্য পুষ্টি উপাদান অতিরিক্ত যোগ করা থাকে। যেমন—এক কাপ সয়ামিল্কে দৈনিক ক্যালসিয়ামের প্রায় ২০ শতাংশ পাওয়া যায়, বাদাম দুধ বা ওট দুধেও প্রায় একই পরিমাণ থাকে। এক কাপ কমলালেবুর জুসে প্রায় ৩৫ শতাংশ ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এগুলো বিশেষভাবে হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং যারা দুধ পান করতে পারে না বা ভেজান খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে তাদের জন্য খুব ভালো বিকল্প।
চিজ
চিজ বা পনির দুধজাত খাবারের মধ্যে ক্যালসিয়ামে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। পারমিজান চিজে এক আউন্সে থাকে প্রায় ২৪২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। শক্ত চিজে তুলনামূলক বেশি ক্যালসিয়াম থাকে, আর নরম চিজে কম। চিজে প্রোটিনও ভালো পরিমাণে থাকে এবং ল্যাকটোজ কম থাকায় অনেকের সহজে হজম হয়।
দই
এক কাপ দই শরীরের প্রতিদিন ক্যালসিয়ামের প্রায় ৩০ শতাংশ সরবরাহ করে। এটি প্রোবায়োটিকসেরও ভালো উৎস, যা হজমে সাহায্য করে ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। লো-ফ্যাট দইয়ে ক্যালসিয়াম আরও বেশি থাকে, তবে গ্রিক দইয়ে তুলনামূলক কম।
ডাল ও শিম
ডাল, ছোলা ও শিমে ক্যালসিয়ামসহ ফাইবার, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যেমন—এক কাপ রান্না করা ডালে প্রায় ৩৭ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এগুলো রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
বাদাম
বাদাম ক্যালসিয়ামে ভরপুর ও হৃদ্রোগ ভালো রাখে এমন ফ্যাটে ভরপুর। ২৩টি বাদাম খেলে দৈনিক ক্যালসিয়ামের প্রায় ৮ শতাংশ পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতে ফাইবার, ভিটামিন ‘ই’ ও ম্যাগনেসিয়ামও থাকে।
পাতাযুক্ত সবজি
পাতাযুক্ত সবজিতে ভালো পরিমাণ ক্যালসিয়াম আছে। এক কাপ রান্না করা পালংশাকে প্রায় ২৪৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। তবে পালংশাকে অক্সালেট নামের উপাদান থাকায় এর ক্যালসিয়াম শরীরে কম শোষিত হয়।
ফর্টিফায়েড খাবার
ময়দা বা কর্নমিল ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ করে তৈরি করা হয়। এগুলোতে কখনো কখনো সারা দিনের ক্যালসিয়াম চাহিদা মেটায়। তবে একবারে বেশি না খেয়ে দিনে ভাগ করে খাওয়াই ভালো।
দুধ
ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে সহজে পাওয়া যায় দুধে। এক কাপ দুধে ৩০৬–৩২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। ছাগলের দুধেও প্রায় একই পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। দুধে প্রোটিন, ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ থাকায় এটি হাড়ের জন্য সম্পূর্ণ পুষ্টিকর খাবার।
ডুমুর
এটি এমন একটি ফল, যা শুকনো অবস্থায় ক্যালসিয়াম ও ফাইবারে সমৃদ্ধ। প্রায় ৪০ গ্রাম শুকনো ডুমুরে দৈনিক ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনের প্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতে ভিটামিন ‘কে’ ও পটাশিয়ামও থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য এবং হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। শুকনো ডুমুর নিয়মিত খাওয়া হাড় শক্ত রাখতে এবং হজমও ভালো রাখতে সাহায্য করে।
শুধু দুধ নয়, বীজ, বাদাম, মাছ, সবজি এবং ফর্টিফায়েড খাবার থেকেও পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। শরীরের হাড় ও দাঁত শক্ত রাখতে এবং পেশি ও স্নায়ুর কার্যক্রম ঠিক রাখতে প্রতিদিন সুষম খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা জরুরি। খাবারের বিষয়ে সচেতনাই পারে আপনাকে সুস্থ জীবন দিতে।
সূত্র: হেলথলাইন