বিস্ময়কর ঔষধি গুণ এবং সেই সঙ্গে খাদ্যে স্বাদ এবং ঘ্রাণ বৃদ্ধিতে রসুনের তুলনা খুব কম আছে! ভারতীয়, মিসরীয়, ব্যাবিলনীয়, গ্রিক, রোমান ও চীনা সভ্যতায় ওষুধ হিসেবে রসুন ব্যবহারের কথা জানা যায়। প্রথম দিকে রসুন শুধু বিভিন্ন অসুখ সারানোর জন্যই ব্যবহার হতো। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় রাশিয়ান সেনাদের চিকিৎসার জন্য রসুনের ব্যাপক ব্যবহারে এর আরেকটি নাম হয়েছিল ‘রাশিয়ান পেনিসিলিন’। কারণ, রসুন ক্ষতিকর অণুজীব, ছত্রাক এবং এমনকি ভাইরাস দমনে অনেকটাই অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে।
রসুনের উপকারিতা:
রসুনের গুণের শেষ নেই। এর মধ্যে যেগুলোর কথা উল্লেখ করতেই হয়—
* বেশ কিছু ভিটামিন আছে এতে, আছে সেলেনিয়াম। এটি ক্যানসার প্রতিরোধে দারুণ কাজ করে।
* রসুনে আছে এলিসিন নামে খুবই চমৎকার একটি উপাদান। সে জন্য বিশেজ্ঞেরা হৃদ্পিণ্ডের শক্তিবর্ধক রসুনকে ‘সুপার ফুড’ আখ্যা দিয়েছেন।
* রসুন খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বাড়ায়।
* এটি ত্বক ভালো রাখে। চেহারার রুক্ষতা দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, দীর্ঘদিন চেহারায় লাবণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
* অঙ্কুরোদ্গম হলে রসুনে বাড়তি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।
* বদহজম সারাতে এটি সহায়তা করে।
* পাকস্থলীর আলসার ও ক্যানসারের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এটি।
* ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর উপশমে রসুন সহায়তা করে।
* রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে রসুন খুবই উপকারী।
রসুন খেতে পারেন নানাভাবে—
* সকালে খালি পেটে রসুন চিবিয়ে খাওয়া যায়।
* একটু অলিভ তেলে একটি লেবু পাতাসহ রসুন কোয়া থেঁতলে নিয়ে সালাদে মিশিয়ে খেতে ভালো লাগবে।
* তরকারিতে মসলা হিসেবে রসুন খাওয়া যায়।
* গোটা রসুন মাংসে দিয়ে খাওয়া যায়। রসুনের ভর্তা আমাদের দেশে জনপ্রিয় খাবার।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
দিনে চার কোয়ার বেশি কাঁচা রসুন খেলে শরীরে কাটা চেরা থেকে রক্ত জমাট বাধায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদিও এর আশঙ্কা খুবই কম, তবে কোনো কোনো অস্ত্রোপচারের অন্তত দশদিন আগে ও পরে রসুন খাওয়া কমিয়ে দিতে চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মইনুল হাসান: ফ্রান্সপ্রবাসী গবেষক