সরিষায় সরস সে মহিমা অপার
রজত কান্তি তার অতি মনোহর।
রায় কহে শোনো বাপু,
খাও মন দিয়া।
ভাজা ঝোল মাখো মাখো
কাছাটি খুলিয়া।
বছর দুই আগে একটি লেখার ভূমিকা হিসেবে হঠাৎ করেই লিখেছিলাম ওপরের ছড়াটি। কবিতা লিখতে পারি না বলে মনে ভীষণ খেদ থাকলেও ছড়াটি লিখে বেশ খানিক আত্মতৃপ্তি পেয়েছিলাম।
এবার একটা খুব সহজ প্রশ্ন করি। লাউপাতার সঙ্গে ইলিশের সম্পর্ক কী?
কেন ইলিশ নিয়ে আমাদের এত গর্ব, এত আদিখ্যেতা, এত কাব্য-কবিতা? বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে নিশ্চয়ই। আমার শুধুই মনে হয়, বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্নভাবে ইলিশ খাওয়া যায়। তা ছাড়া, এই একটা মাছ, যাকে খুব অল্প মসলায় ভাজা, ভাপা, ঝোল যেভাবে ইচ্ছা খাওয়া যায়। লবণ, তেল, কাঁচা মরিচ, খানিক সরিষা আর হলুদ হলেই খাওয়া যায় ইলিশ নামের অমৃত।
হেমন্তের দুপুরগুলো বেশ বিষণ্ন হয়। নদীর একঘেয়ে পরিবেশে সে বিষণ্নতা আরও বেশি। কিন্তু নরম আলোয় পিঠ পেতে দিয়ে মাড়ভাতের সঙ্গে ইলিশশিকারি মাঝি যখন ভাপা ইলিশ খায়, তখন বিষণ্নতা দূর হতে বাধ্য। আমার তেমনি মনে হয়। সম্প্রতি মাঝিদের রান্না করা একটি পুরোনো রেসিপির সন্ধান পেয়েছি। খুব সহজ রেসিপি। ইলিশ মাছ পরিষ্কার করে কেটে নিয়ে লবণ-হলুদ আর সরিষার তেল মেখে রেখে দিতে হবে কিছু সময়ের জন্য। ভাত খাওয়ার আগে মাখানো টুকরোগুলো পাতে দিয়ে তার ওপর হাঁড়ি থেকে গরম ভাত তুলে দিতে হবে। ব্যস, আর কিছু না। হাঁড়ি থেকে নামানো ভাতের গরমেই সেদ্ধ হয়ে যাবে ইলিশ। তারপর খেতে হবে। যাঁরা খেয়েছেন তাঁরা জানিয়েছেন, এভাবে ইলিশ খেতে দারুণ লাগে।
শীতে কাবাব খাওয়ার মজাই আলাদা। শীত বিকেলের কনে দেখা চুরিয়ে যাওয়া আলো নিভে গেলে আগুনের কুণ্ডলী বানিয়ে তাতে মাছ বা মাংসের কাবাব বানানোর এক রোমাঞ্চকর আনন্দ আছে। ইলিশেরও কাবার বানানো যায় একটু কষ্ট করলে। আসন্ন শীতে বানিয়ে ফেলতে পারেন ইলিশের কাবাব। রেসিপি?
গ্রিল বা মাইক্রো যেকোনো ওভেনেই বেক করা যায়। আবার এটিকে পাউরুটি বানানোর তন্দুরেও বেক করে নিতে পারেন সুযোগ থাকলে। বেক করার সময় ইলিশের সুবাস এলেই ট্রে বের করে নিতে হবে। কাবাব বানানোর জন্য ব্রেড ক্র্যাম্ব ব্যবহার করতে পারেন চাইলে। সে ক্ষেত্রে প্রথমবার বেকিং করার পর বের করে ইলিশের ওপর ব্রেড ক্র্যাম্ব ছড়িয়ে দিয়ে আরও মিনিট পাঁচেক বেক করে নিতে হবে।
কেন ইলিশ সেরা তার উত্তর বাঙালি ছাড়া আর কে জানবে ভালো?
রেসিপি: সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন ও নিবেদিতা নার্গিস