হোম > জীবনধারা

তুর্কি এই গ্রামটিকে বাঁচিয়েছিলেন এক কবি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

গ্রামের স্থাপত্য আইন মেনে তৈরি হয়েছে স্থানীয় ইউচেলেন হোটেল। ছবি: সিএনএন

তুরস্কের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় মুগলা প্রদেশে পাইন গাছে আচ্ছাদিত পাহাড় আর আজমাক নদীর স্বচ্ছ জলের কোলে শান্ত ছোট্ট গ্রাম আকিয়াকা। এই গ্রামের সাদা রঙের কাঠের ফ্রেমে গড়া ঘরগুলো যেন প্রকৃতির সঙ্গেই মিশে আছে। বসন্তে এই গ্রাম ভেসে যায় কমলা ফুলের গন্ধে।

আজকের দিনে আকিয়াকা যেন ছবির মতো এক স্বর্গ। কিন্তু কয়েক দশক আগেও এর ভবিষ্যৎ ছিল অনিশ্চিত। ঠিক সেই সময়টিতে গ্রামটিতে হাজির হয়েছিলেন এক কবি। তাঁর দূরদৃষ্টিই আজও অনন্য করে রেখেছে আকিয়াকাকে।

সিএনএন জানিয়েছে, ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে আকিয়াকা ছিল জলাভূমির ধারে মশা-আক্রান্ত ছোট্ট একটি জেলে-পল্লি। তুরস্ক জুড়ে পর্যটন বাড়তে থাকায় আনাতোলিয়ার বহু গ্রামে যেমন দ্রুত কংক্রিটের দালান উঠতে থাকে, আকিয়াকা গ্রামেও একই ধরনের রূপান্তর ঘটতে শুরু করে। তবে ১৯৭১ সালে এই গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক স্ত্রীর সঙ্গে অবসরজীবন কাটাতে চলে এসেছিলেন কবি ও বুদ্ধিজীবী নাইল চাকিরহান। কিন্তু তিনি নিভৃত জীবন না কাটিয়ে গ্রামটির ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষায় নেমে পড়েছিলেন।

এই গ্রামে নেই কংক্রিটের কোনো বাড়ি। ছবি: সিএনএন

স্থাপত্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও চাকিরহান স্থানীয় অটোমান ধাঁচের স্থাপনার অনুপ্রেরণায় সমুদ্রের ধারে উঁচু এক পাহাড়ে নিজের বাড়ি নির্মাণ করেন। কাঠের ফ্রেম, চুন–পোতা সাদা দেয়াল, গভীর ছাউনি আর প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহের সুবিধা—সব মিলিয়ে বাড়িটি হয়ে ওঠে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া এক আধুনিক স্থাপত্য। অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ হওয়ায় কাঠের কাঠামোও ছিল নিরাপদ।

এই বাড়ির নকশাই বদলে দেয় পুরো গ্রামকে। চাকিরহানের বাড়ি যেমন আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের চমৎকার মেলবন্ধন দেখিয়েছিল, ঠিক তেমনই স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা একই ধাঁচে বাড়ি বানাতে শুরু করেন। এর ফলে পুরোনো কাঠমিস্ত্রিদের কাজ আবারও জেগে ওঠে। তৈরি হয় দক্ষ নতুন কারিগরদের এক প্রজন্ম।

প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও ১৯৮৩ সালে চাকিরহান তাঁর অবদানের জন্য আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার পান। ১৯৯০-এর দশকে আকিয়াকার নগর–পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় তাঁর স্থাপত্য–মানদণ্ডকে আইন হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ফলে ভয়াবহ কংক্রিটের দখল থেকে গ্রামটি চিরদিনের জন্য রক্ষা পায়। স্থানীয় বহু মানুষের জীবনও বদলে যায় এর ফলে। স্থানীয় ইউচেলেন হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা হামদি ইউচেল গুরসয় জানান, চাকিরহান তাঁকে বাণিজ্যিক মনোভাব থেকে প্রকৃতি ও সংস্কৃতির প্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তাঁরই প্রেরণায় আজ তিনি এই অঞ্চলের পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিদের একজন।

আকিয়াকা গ্রাম দেখতে আসা একদল পর্যটক। ছবি: সিএনএন

চাকিরহানের সাবেক সহকারী এনিজ তুঞ্চা ওজসয় জানান, আকিয়াকা গ্রাম একসময় তুর্কি বুদ্ধিজীবীদের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছিল। জীবনমান ও ঐতিহ্য রক্ষার স্বীকৃতি হিসেবে আজ এই গ্রাম ‘সিটাস্লো’ (স্লো সিটি) বা শান্ত শহরের মর্যাদা পেয়েছে। এই গ্রাম দেখতে এসে এজগি ইয়াসেমিন বলেন, ‘প্রাচীন নগর, পাহাড়, ইউক্যালিপটাস, কমলা বাগান, আজমাকের স্বচ্ছ জল—সব মিলিয়ে যেন এক অপূর্ব সমাহার।’

তবে জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপও বাড়ছে আকিয়াকার ওপর। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে শহর ছেড়ে আসার প্রবণতায় গ্রামটিতে লোকসমাগম বেড়ে গেছে। গ্রামের স্থাপত্য আইন কংক্রিট ঠেকালেও এখানকার শান্ত জীবনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে গ্রীষ্মের ভিড় ও শব্দ।

আকিয়াকার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করা এখনো সম্ভব। তবে শহরটি উপভোগ করার সেরা সময় হলো ব্যস্ত মৌসুমের বাইরে—যখন শ্বাস নেওয়ার মতো জায়গা থাকে, পরিষ্কার রাতের আকাশ থাকে তারায় ভরা, আর চাকিরহানকে অনুপ্রাণিত করা একই পাখির গান শোনা যায় গাছে গাছে।

মধুতে বিষ! শত শত বছর ধরে খেয়ে চলেছে মানুষ এই বিশেষ মধু

শীতে চাদর স্টাইলিং করবেন যেভাবে

সবুজ পৃথিবীর জন্য ২০২৬: নতুন বছরে কিছু পরিবেশবান্ধব সংকল্প নিন

শীতে ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি খেতে হবে এই কয়েকটি খাবার

জেন-জি প্রজন্ম কি আসলে ভীত?

আজকের রাশিফল: প্রেমের সম্ভাবনা নষ্ট করবে অহংকার, সময় নিয়ে দাঁত মাজুন

চ্যাপা শুঁটকির পিঠা

২০২৬-এর ডায়েট রেজল্যুশন: নতুন বছর শুরু হোক টেকসই অভ্যাস নিয়ে

কোরিয়ানরা কেন কালো-সাদা পোশাকে ‘আসক্ত’

মাথার ওপর মরুকরণ: কেন বিশ্বজুড়ে কমছে পুরুষের চুলের ঘনত্ব