ব্যস্ততা-বিশৃঙ্খলায় ভরপুর এ জীবনে শান্তির খোঁজে হাসফাঁস করছি সবাই। কীভাবে মেলে শান্তি! কিন্তু শান্তির খোঁজ করতে যে সময় দেব সেই সময়টাও কই! এজন্য দৈনন্দিন কাজের মাঝেই শান্তি কীভাবে খুঁজে পাওয়া যায় সেটার উপায় খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা।
মানসিক চাপ ও ক্লান্তি দূর করতে অনেকে জীবনযাত্রায় আনছেন নতুন নতুন পরিবর্তন। সম্প্রতি অনলাইনে এমনই এক ট্রেন্ড বেশ চোখে পড়ছে। তা হলো—‘ডার্ক শাওয়ারিং’।
‘ডার্ক শাওয়ারিং’-এর মানে হলো সম্পূর্ণ অন্ধকারে গোসল করা। আপনি যখন গোসল করবেন তখন সেখানে কোনো আলো থাকবে না। অন্ধকারে শরীরের ইন্দ্রিয়গুলো গভীরভাবে কাজ করে। যার ফলে গোসলের অভিজ্ঞতা হয় আরও গভীর, মনোযোগী ও প্রশান্তিদায়ক।
অন্ধকারে গোসল করা শুধু নতুনত্ব নয়, এর রয়েছে বেশ কিছু শারীরিক ও মানসিক উপকারও। এই পদ্ধতিকে অনেকেই মানসিক স্বস্তি এবং স্ট্রেস কমানোর একটি সহজ উপায় হিসেবে দেখছেন।
ডার্ক শাওয়ারিং-এর উপকারিতা
১. সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি
চোখের দৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে শরীরের অন্য ইন্দ্রিয়গুলো, বিশেষ করে হাতের স্পর্শে কিছু বোঝার অনুভূতি তীব্রভাবে সক্রিয় হয়। পানির স্পর্শ, উষ্ণতা বা ঠান্ডার অনুভূতি আরও গভীরভাবে টের পাওয়া যায়। এতে গোসলের অভিজ্ঞতা হয় অনেক বেশি তৃপ্তিদায়ক।
২. মানসিক প্রশান্তি ও ধ্যানের অনুভূতি
অন্ধকারে গোসল ধ্যানের মতো শান্ত ও মনোযোগী হওয়ার মতো অভিজ্ঞতা দেয়। মন শান্ত হয়, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমে। ধীরে ধীরে শরীর ও মন দুটোই আরাম পায়।
৩. রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে
পানির তাপমাত্রার আকস্মিক পরিবর্তন এবং ত্বকে পানির প্রবাহ শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সহায়তা করে। এর ফলে শরীর সতেজ থাকে এবং পেশির টান কমে।
৪. মস্তিষ্কের অতিরিক্ত চাপ কমায়
ক্যালিফোর্নিয়ার এমেন ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ড্যানিয়েল এমেন বলেন, হালকা আলো বা অন্ধকার পরিবেশ মস্তিষ্কের ‘হুমকি শনাক্ত করার রাডার’ বা ‘থ্রেট রাডার’-কে বিশ্রামের সুযোগ দেয়।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, আলো মস্তিষ্ককে শক্তিশালীভাবে প্রভাবিত করে। তাই আলো কমলে মস্তিষ্কে উত্তেজনা কমে এবং যুক্তিসংগত চিন্তা ফিরে আসে। অনেকের ক্ষেত্রে এটি শান্ত, স্পষ্ট ও স্থিতিশীল অনুভূতি দেয়।
ড. এমেনের মতে, দৃষ্টিগত তথ্য কমে গেলে মস্তিষ্কে সেন্সরি চাপও কমে যায়। ফলে ভয় ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণকারী অংশের প্রতিক্রিয়া কমে। যার প্রভাবে মন শান্ত ও ফুরফুরে হয়ে ওঠে।
‘ডার্ক শাওয়ারিং’ করবেন যেভাবে
অন্ধকারে গোসলে উপকার পেতে কিছু বিষয় অনুসরণ করতে হবে—
১. অন্ধকার পরিবেশ তৈরি
স্নানঘরের আলো নিভিয়ে দিতে হবে অথবা ভারী পর্দা বা গাঢ় রঙের পর্দা ব্যবহার করতে হবে যাতে ভেতরে যতটা সম্ভব অন্ধকার তৈরি করা যায়।
২. মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন সবকিছু থেকে দূরে
মোবাইল, মিউজিক বা অন্য কোনো ডিভাইস রাখবেন না যার শব্দে বা আলোতে মনোযোগ ব্যাহত হতে পারে। পুরোপুরি নিজের শরীর ও অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে মন দিন।
৩. ইন্দ্রিয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দিন
ত্বকে পানির স্পর্শ এবং পানির শব্দ আর সাবান বা শ্যাম্পুর গন্ধের দিকে মনোযোগ দিন। চাইলে ল্যাভেন্ডার বা ক্যামোমাইলের মতো সুগন্ধি রাখতে পারেন, যা প্রশান্তি দেয়।
৪. মস্তিষ্কের বিশ্রাম মেলে এমন পরিবেশ তৈরি করুন
ড. ড্যানিয়েল এমেনের ভাষায়, ‘মস্তিষ্ক পূর্বানুমান অনুযায়ী চলে। আপনি মস্তিষ্ককে শান্ত করতে কিছু করছেন না বরং এমন এক পরিবেশ তৈরি করছেন যেখানে মস্তিষ্ক নিজে থেকেই ধীরে বিশ্রামে চলে যায়।’