রূপের সায়র সাঁতরে বেড়ায়
পানকৌড়ি পাখি
ওই কাজল-কালো আঁখি। [...]
-কাজী নজরুল ইসলাম
কাজল কালো চোখে মায়াবী কাজলরেখা এক অমোঘ আকর্ষণ। কখনো তা বেহাগ, কখনো ভৈরবী সুর, কখনো নজরুলে, কখনো চৌরাশিয়ার বাঁশিতে! এমন যে কাজল, তার টান কি নারীরা ফেরাতে পেরেছেন?
সাজগোজে একেবারেই মন না-থাকা নারীর সাজবাক্সেও যত্নে রাখা থাকে কাজল ও আইলাইনার। বিভিন্ন দেশের নামীদামি ব্র্যান্ডের নানা ধরনের কাজল ও আইলাইনার বাজারে পাওয়া যায়। যুগের সঙ্গে এতে কালোর পাশাপাশি যোগ হয়েছে নীল, বেগুনি, সবুজসহ বিভিন্ন রং। রংবাহারের চেয়েও বৈচিত্র্যময় হলো, কাজলের রেখা। কাজল টানার ক্ষেত্রে একেক দেশে রয়েছে একেক রেখা। আবার একেক শতাব্দীতে আসে একেক ঘরানার রেখার সাজ।
বিশ শতকের শুরুর দিকের কথাই যদি বলি, তখন ভারী চোখের সাজ সমাদর পেয়েছিল। অভিজাত নারীরা সুরমা আইলাইনার হিসেবে ব্যবহার করতেন। এ সময় থেকেই শুরু হয় কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে চোখের পাতায় আইশ্যাডো লাগিয়ে তারপর কাজল পরার ট্রেন্ড।
ত্রিশের দশকে রূপসচেতন নারীরা ভ্রুর দিকে নজর দিতে শুরু করেন। তখন ভ্রু ধনুর মতো বাঁকিয়ে ছেঁটে আইব্রো পেনসিল দিয়ে গাঢ় ভ্রুর রেখা আঁকার রেওয়াজ ছিল। এ সময় থেকে নারীরা চোখের সাজে মাসকারা ব্যবহার করতে শুরু করেন। এ দিকে আবার চল্লিশের দশকে একটু মোটা ধাঁচে ভ্রু রাখতে শুরু করেন নারীরা। এ সময় আইলাইনার ছোঁয়ানো হতো চোখের পাতার পাপড়ি ঘেঁষে, একেবারেই চিকন করে। পাপড়িগুলোকে বড় দেখানোর জন্য বুলিয়ে দেওয়া হতো মাসকারার প্রলেপ।
পঞ্চাশের দশকে আন্তর্জাতিক সেলিব্রেটিদের চোখের সাজে আসে স্মোকি আইশ্যাডো ও ছাইরঙা লেন্স। তখন আইলাইনার চোখের রেখার অনেকখানি বাইরে অবধি টেনে নেওয়া হতো। সে সময় কৃত্রিম আইল্যাশের ব্যবহার শুরু হতে থাকে। এরপর গত শতকের নব্বইয়ের দশকে চোখের ওপর মোটা করে আইলাইনার বা কাজলের রেখা টানা শুরু হয়। তবে সে রেখা চোখের বাইরে টানা হতো না।
এখন চোখের সাজ ফুটিয়ে তোলার অন্যতম উপকরণ আইব্রো। ভ্রু কালো ও দীর্ঘ করতে চোখের শেষ রেখা অবধি আইব্রো পেনসিল দিয়ে টেনে দেওয়া হয় ভ্রু। অনেকেই চোখের শুরুর কোনা থেকে একটু চোখা করে রেখা বাড়িয়ে চোখের শেষে লম্বা করে টেনে নেন আইলাইনার। চোখ বড় ও মায়াবী দেখাতে চোখের নিচে এঁকে দেওয়া হয় সাদা, সোনালি ও হালকা বাদামি আই পেনসিলের রেখা।
চোখের কাজলরেখা যেভাবেই টানা হোক না কেন, কাজলমাখা এক জোড়া চোখ যেন আজীবনই প্রেম ও কাব্যের আশ্রয়।
আরও কিছু টুকিটাকি