শারদীয় উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ মেলা। গ্রাম কিংবা শহর, পূজা যেখানেই হোক না কেন মেলা বসবেই— তার আকার ও আয়তন যেমনই হোক। পূজা দেখতে গিয়ে মেলায় যদি কিছু নাই খান, তাহলে মেলায় যাওয়া ঠিক পরিপূর্ণ হবে না। এসব মেলার প্রধান আকর্ষণ খাবার। তবে মেলা হলো বৈচিত্র্যপূর্ণ মুখরোচক খাবারের কেন্দ্রবিন্দু। একেকটি মেলায় এক সঙ্গে যে পরিমাণে এবং যত বিচিত্র খাবারের দেখা মেলে, অন্য কোথাও তার হদিস পাওয়া যায় না।
পূজার মেলার খাবারের একটা প্যাটার্ন আছে, যেটা অনন্য। এই মেলাগুলোতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে মিষ্টিজাতীয় খাবার। এই মিষ্টিগুলো আমাদের প্রাচীন মিষ্টিজাতীয় খাবারের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে এখনো। এর বড় কারণ সম্ভবত ধর্মীয় সংস্কার। পূজায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষ নিরামিষ খেয়ে থাকেন। ফলে বাড়ির বাইরে মিষ্টি খাবার ছাড়া অন্য খাবার খাওয়াটা তাঁদের জন্য কঠিন।
যে মিষ্টি খাবার বছরের অন্য সময় খুব একটা দেখা যায় না, সেই বাতাসার দেখা পাওয়া যায় মেলায়। স্বাদের বদল না হলেও এর গড়ন বই বিচিত্র। সেগুলোর কোনোটার আকার গোল তো কোনোটা আবার ত্রিভুজ। কোনোটা লম্বাটে। ছাঁচে বানানো এই বাতাসাগুলোর কোনোটি হাতির আদলে বানানো, কোনোটি বানানো মাছের আদলে। কোনোটি আবার বানানো হয় গোল কদমের আকারে। কোনো কোনোটি কয়েনের মতো দেখতে। ছাঁচে বানানো বাতাসা আমাদের প্রাচীন মিষ্টিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
গুড়ের বা চিনির তৈরি মুরগি মেলার অন্যতম খাবার। অঞ্চল ভেদে এর বিভিন্ন নাম আছে। কোথাও কোথাও এটির নাম খুরমা। আঙুলের মতো দেখতে বলে কোথাও এর নাম আঙুলি। নাম যা হোক বস্তু একই। ময়দা বা আটা খামির করে তেলে ভেজে এটি চিনি বা গুড়ের সিরায় ডুবিয়ে উল্টে পাল্টে মেখে নেওয়া হয়। সাধারণত আঙুলের মতো দেখতে হলেও এর আকারে ভিন্নতা আছে। মেলায় সেজেগুজে থাকতে দেখা যাবে প্রচুর পরিমাণে।
এ ছাড়া পাওয়া যাবে ত্রিভুজ নিমকি, কদমা, নারকেলের নাড়ু বা নারকেল কোটা, মুড়ি-চিড়া-তিলের মোয়া। পাওয়া যাবে বুট ও বাদাম ভাজা। আর বিভিন্ন এলাকার নিজস্ব খাবার পাওয়া যাবে সেই এলাকাগুলোর মেলায়। যেমন, গুলগুলা সব জায়গায় পাওয়া যাবে না। কিংবা মরিচের ফুরুলি বা বেসন দিয়ে ধনেপাতার ভাজা। সেগুলো দিনাজপুরের কোনো গ্রামের মেলায় হয়তো কিনতে পাবেন।