প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকলে হলে হতে হবে অনেক বেশি কৌশলী ও সচেতন। শেষ মুহূর্তে কৌশলী ও সচেতন হতে প্রার্থীদের দিকনির্দেশনা ও প্রস্তুতিমূলক পরামর্শ দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষা ক্যাডারে (৪৫তম) সুপারিশপ্রাপ্ত আরাফাত শাহীন।
মানবণ্টন
প্রথমেই আমরা সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত (এমসিকিউ টাইপ) পরীক্ষার মানবণ্টন সম্পর্কে জেনে নিই। উল্লেখ্য, গত নিয়োগ পরীক্ষা ৭৫ নম্বরের হলেও এবার পরীক্ষা হবে ৯০ নম্বরের। ৯০ মিনিটের এই পরীক্ষায় বাংলা ২৫, ইংরেজি ২৫, গণিত ও বিজ্ঞান ২০, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক) ২০ নম্বরের অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ এবং প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা যাবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
বাংলা
বাংলার দুটি অংশ ব্যাকরণ ও সাহিত্য। সাধারণত ব্যাকরণ অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে। ব্যাকরণে ভালো করতে হলে নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বইটি পড়া জরুরি। এ ছাড়া যেসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন সেগুলো হচ্ছে ধ্বনি ও ধ্বনি পরিবর্তন, শব্দ, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, সন্ধি, সমাস, উপসর্গ, অনুসর্গ, বানান ও বাক্য শুদ্ধকরণ, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, বাগধারা। সাহিত্য অংশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো চর্যাপদ, মধ্যযুগের রোমান্টিক সাহিত্য, আধুনিক যুগের সাহিত্যকর্ম (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, পঞ্চপাণ্ডব, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ফররুখ আহমদ, আল মাহমুদ, জসীম উদ্দীন প্রমুখ), সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকা ও সাময়িকী, সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম ও উপাধি।
ইংরেজি
বাংলার মতো ইংরেজিতেও দুটি অংশ থাকে; একটি Grammar, অপরটি Literature. সাধারণত Grammar অংশ থেকেই বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে। Literature অংশ থেকে যে কয়েকটি প্রশ্ন আসে তা বিগত সালের বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে গেলেই কমন পাওয়া যাবে। Grammar অংশে ভালো করতে হলে Parts of Speech, Number, Gender, Article, Appropriate Preposition, Right form of Verb, Correction, Vocabulary (Spelling, Meaning, Synonyms, Antonyms) সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।
গণিত
গণিতে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন আসে পাটিগণিত থেকে। এখান থেকে বাস্তব সংখ্যা, ল. সা. গু. , গ. সা. গু., ঐকিক নিয়ম, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, মুনাফা, অনুপাত ও সমানুপাত অধ্যায়গুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। বীজগণিতের জন্য উৎপাদক, সূচক ও লগারিদম, বীজগণিতের সূত্রাবলি, সরল সমীকরণ ও অসমতা ভালোভাবে আয়ত্তে রাখতে হবে। পাশাপাশি জ্যামিতি থেকে পরিমিতি ও ত্রিকোণমিতি, রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, ক্ষেত্রফল ও বৃত্ত সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ বিষয়াবলি)
ভালো নম্বর তোলার জন্য এই অংশটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ জ্ঞানে ভালো করতে হলে বিগত সালের বিসিএসসহ পিএসসি কর্তৃক নেওয়া সব পরীক্ষা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ও নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্নগুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ অংশের জন্য যেসব অধ্যায় দেখা যেতে পারে: বাংলাদেশের ইতিহাস (১৯৪৭-১৯৭০), মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, নদ-নদী, অর্থনীতি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খেলাধুলা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্য সম্পর্কে জানাশোনা থাকতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
আন্তর্জাতিক অংশের জন্য ভৌগোলিক পরিচিতি, আন্তর্জাতিক সীমানা, নদ-নদী, প্রণালি, গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সনদ, জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠন, পরিবেশগত ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করতে হবে।
এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অংশের জন্য দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রযুক্তি, কম্পিউটার, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, সাধারণ রোগব্যাধি, পুষ্টি অধ্যায়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ নির্দেশনা
পরীক্ষার জন্য খুব বেশি সময় হাতে নেই। এই অল্প সময়ে ভালো করতে হলে গোছালো প্রস্তুতির বিকল্প নেই। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোমতো আয়ত্তে রাখতে হবে। নতুন করে আর তেমন কিছু না পড়াই উত্তম। পুরোনো পড়া বারবার ঝালাই করতে হবে। এই কদিন যেন শরীর ও মন সুস্থ থাকে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
অনুলিখন: জেলি খাতুন