হোম > ইসলাম

পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা ইবাদতের অংশ

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 

প্রকৃতি ও পরিবেশ মহান আল্লাহর অপার দান। মাটি, পানি, গাছপালা, পশুপাখি, পোকামাকড়—সৃষ্টিকুলের প্রতিটি উপাদানই নিজস্ব কর্মের মাধ্যমে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে। এই সুশৃঙ্খল সহাবস্থান মহান রাব্বুল আলামিনের এক অসাধারণ শিল্পকর্ম। আল্লাহর সৃষ্টিতে রয়েছে কত জ্ঞান ও শিক্ষা, যা আমরা অনেক সময় দেখেও দেখি না। অথচ প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান নিয়ে গভীর ভাবনা একজন মুমিনের ইমানকে দৃঢ় করে এবং আল্লাহভীতিকে আরও জোরালো করে।

মানুষকে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে তাঁর ‘খলিফা’ বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এই প্রতিনিধিত্বের মূল দায়িত্ব হলো আল্লাহর দেওয়া আমানত, অর্থাৎ এই পৃথিবীকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা। এটি কেবল একটি নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি ইবাদতেরও অংশ। আধুনিক বিশ্বে যখন পরিবেশদূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের সংকট মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন ইসলামপ্রদত্ত পরিবেশ সুরক্ষার বিধানগুলো আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

উদ্ভিদ ও বৃক্ষরোপণের ফজিলত

ইসলামে বৃক্ষরোপণকে এক মহৎ কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) উম্মতকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করেছেন। আজ থেকে প্রায় পনেরো শ বছর আগে তিনি পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় যে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, তার গুরুত্ব আজও আমাদের কাছে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

হাদিসে এসেছে, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি লাগাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৫০)। কিয়ামতের মতো ভয়াবহ দিনেও একটি গাছের চারা রোপণের এই নির্দেশনা পরিবেশের প্রতি ইসলামের গভীর অঙ্গীকারের প্রমাণ।

আরও এক হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি একটি বৃক্ষের চারা রোপণ করে অথবা খেতখামার করে, অতঃপর তা থেকে মানুষ, পাখি বা কোনো জন্তু ভক্ষণ করে, তবে তা তার জন্য সদকার সওয়াব হবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৫৩২)। এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে পরিবেশ সুরক্ষায় প্রতিটি ক্ষুদ্র কাজও আল্লাহর কাছে কত মূল্যবান। এমনকি যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতেও তিনি সৈন্যদের বিনা কারণে গাছ কাটতে নিষেধ করতেন, যা আধুনিক পরিবেশবাদী যুদ্ধনীতিতেও স্থান পায়নি।

প্রাণিজগতের প্রতি সংবেদনশীলতা

পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো প্রাণিজগৎ। এদের প্রতি অহেতুক নিষ্ঠুরতা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে প্রাণীদের অঙ্গচ্ছেদ করে।’ (সহিহ বুখারি: ৫১৯৫)। তিনি অহেতুক কোনো প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তু বানানো থেকেও নিষেধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো চড়ুই পাখি মেরে ফেলল, কিয়ামতের দিন পাখিটি আল্লাহর কাছে এই বলে নালিশ করবে—হে আল্লাহ, অমুক ব্যক্তি আমাকে অহেতুক হত্যা করেছে।’ (সুনানে নাসায়ি, ইবনে হিব্বান)।

ইসলামে পশুপাখির প্রতি দয়া ও সহানুভূতির প্রতিও জোর দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে জান্নাতে স্থান পেয়েছিল। অপর দিকে, এক নারী একটি বিড়ালকে আটকে রেখে খাবার না দেওয়ায় জাহান্নামের শাস্তি পেয়েছিল। এমন উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, প্রাণিজগতের প্রতি আল্লাহর দৃষ্টি কতটা সংবেদনশীল।

একবার সাহাবিরা মৌমাছির বাসা জ্বালিয়ে দিলে তিনি বললেন, ‘আগুনের স্রষ্টা ছাড়া কারও জন্য আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়া শোভা পায় না।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৬৭৫)। যেসব প্রাণী প্রতিপালন করা হয়, সেগুলোর সুস্থতা ও খাবারদাবারের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করাকে ইসলামে ওয়াজিব করা হয়েছে।

পানির অপচয় নয়, সুরক্ষাই কর্তব্য

জীবন ধারণের জন্য পানি অপরিহার্য। পানির প্রাচুর্য থাকলেও এর অপচয় ইসলাম কোনোভাবেই অনুমোদন করে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার হজরত সাদ (রা.)-কে অজু করার সময় অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করতে দেখে বলেন, ‘এই অপচয়ের কারণ কী?’ সাদ (রা.) তখন জিজ্ঞেস করেন, ‘অজুর মধ্যেও কি অপচয় আছে?’ নবীজি (সা.) উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি একটি প্রবহমান নদীর তীরেও থাকো, তবু পানির যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

এ ছাড়া, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে তিনি বলেন, ‘মানুষের কষ্ট হয় এমন তিনটি কাজ পরিহার করো: পানির উৎস, চলাচলের রাস্তা ও গাছের ছায়ায় মলত্যাগ কোরো না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)। এই নির্দেশনাগুলো আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি করে।

নৈতিকতার পথে প্রকৃতির সুরক্ষা

নবী করিম (সা.)-এর এই নির্দেশনাগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, পরিবেশের প্রতিটি উপাদান সুরক্ষায় ইসলামে পরিষ্কার বিধান রয়েছে। দুঃখজনকভাবে, আমরা অনেকেই আজ এসব নির্দেশনা ভুলে গেছি। পরিবেশদূষণ ও প্রাণী হত্যা করে কখনোই একটি বাসযোগ্য পৃথিবী আশা করা যায় না। বরং নবী (সা.) নির্দেশিত পরিবেশ বিধিবিধান মেনে চললে এই পৃথিবী আমাদের জন্য সুন্দর ও বাসযোগ্য হবে। পরিবেশ সংরক্ষণকে ইমানের অংশ মনে করে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলেই আল্লাহর দেওয়া এই আমানত আমরা রক্ষা করতে পারব এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারব।

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

জমাদিউস সানির দ্বিতীয় জুমা: মুমিনের করণীয়

মসজিদগুলো হয়ে উঠুক শিশুবান্ধব

ফুটপাতে পথশিশুদের হিমশীতল রাত

ফরজ গোসলের সময় নারীদের চুল ধোয়ার বিধান

শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার হারিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

দাওয়াতুল হকের মারকাজি ইজতেমা শনিবার

একের পর এক ভূমিকম্প মুমিনকে যে সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে

স্ত্রীর সঙ্গে ভালোবাসার গভীরতা বাড়াবে যে সুন্নাহ

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫