মানবসভ্যতার ইতিহাসে ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক ঘটনা, যা মুহূর্তেই মানুষের শক্তি, পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিকে অসহায় করে দিতে পারে। বছরের পর বছর ধরে তৈরি করা মজবুত স্থাপনা কিংবা আধুনিক প্রযুক্তির সরঞ্জাম; কোনো কিছুই এর সামনে নিরাপদ নয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে সঞ্চিত অদৃশ্য শক্তি যখন আকস্মিকভাবে বিস্ফোরিত হয়, তখন জমিন কেঁপে ওঠে, ভবনগুলো নড়বড়ে হয়ে যায় আর মানুষ নিজেদের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করতে বাধ্য হয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষের সামনে তাঁর মহাশক্তির পরিচয় তুলে ধরেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা দেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভূমিকম্প শুধু ভূতাত্ত্বিক ঘটনা নয়, এটি মানুষের জন্য অলৌকিক সতর্কবার্তা। পবিত্র কোরআনে বারবার মানুষকে প্রকৃতির ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তাদের বড় শাস্তির আগে অল্প শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাব, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা সাজদা: ২১)
এখানে ‘অল্প শাস্তি’ বলতে রোগ-বালাই, খরা-দুর্ভিক্ষ কিংবা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও বোঝানো হয়। এসব ঘটনা মানুষের অন্তর্দৃষ্টি খুলে দেয়, সে তার ভুলগুলো উপলব্ধি করে, গুনাহ থেকে ফিরে আসে এবং আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে।
ভূমিকম্প কিয়ামতের পূর্বাভাস। পবিত্র কোরআনে কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে ভূমিকম্পের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। নিঃসন্দেহে কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ঘটনা।’ (সুরা হজ: ১)
মানুষ স্বভাবগতভাবে নেক আমল করতে অবহেলা করে, নিজের প্রভুকে ভুলে গুনাহে লিপ্ত হয়, কখনো অহংকারে ডুবে থাকে। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। তাই বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে তিনি মানুষকে সতর্ক করেন।
মানুষ হিসেবে তাই আমাদের উচিত সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকা, সমাজকে ন্যায়ের পথে এগিয়ে নেওয়া এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে জীবনযাপন করা। আল্লাহ আমাদের তাঁর সতর্কবার্তা উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।