হোম > ইসলাম

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের ৫ দিকনির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 

ছবি: সংগৃহীত

দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনের নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জগুলো মানুষের মনে চাপ ও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। হতাশা, দুশ্চিন্তা এবং মানসিক অস্থিরতা এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম তাই আত্মার পরিশুদ্ধির পাশাপাশি মনের সুরক্ষার জন্যও কার্যকরী দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কিছু বিষয় নিচে আলোচনা করা হলো:

১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও স্মরণ: মানসিক প্রশান্তির মূল ভিত্তি হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। যখন মানুষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে জীবনের সব ভালো-মন্দ আল্লাহর হাতে, তখন সে জাগতিক ভয় ও চাপ থেকে মুক্তি পায়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ: ২৮)

তাই নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।

২. ধৈর্য ও শোকর: ইসলাম মানুষকে শিখিয়েছে, কষ্টকে বোঝা হিসেবে না দেখে, ইমানের পরীক্ষা হিসেবে দেখা উচিত এবং এসময় ধৈর্যধারণ করা উচিত। কারণ, ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতা (শোকর) মানসিক স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি যদি নিয়ামত লাভ করে, তবে সে শুকরিয়া আদায় করে...। আর যদি সে কোনো সংকটে পতিত হয়, তবে ধৈর্য ধারণ করে। আর তা তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৯৯৯)

এছাড়া কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চয় কষ্টের সাথেই স্বস্তি রয়েছে।’ (সুরা ইনশিরাহ: ৫)

৩. নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি: দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কেবল একটি ফরজ ইবাদত নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিরতি। এটি জাগতিক ব্যস্ততা থেকে আমাদের মনোযোগ সরিয়ে নিয়ে মনকে শান্ত ও স্থির করে।

হাদিসে এসেছে, যখনই রাসুল (সা.) কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেন, তখন তিনি বিলাল (রা.)-কে বলতেন—‘হে বিলাল, নামাজের ব্যবস্থা করো। এর মাধ্যমে আমি স্বস্তি লাভ করি।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৮৫)

৪. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নিঃসঙ্গতা ক্ষতিকর। এজন্য ইসলাম আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনেও উৎসাহিত করা হয়েছে।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমার শরীরেরও তোমার ওপর অধিকার রয়েছে।’ (সহিহ্ বুখারি: ১৯৬৮)

পর্যাপ্ত ঘুম, পরিমিত খাদ্য এবং শারীরিক ব্যায়াম মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, এখানে শারীরিক ব্যায়ামটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমেই সম্পাদিত হয়ে যায়।

৫. প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ: মানসিক অসুস্থতাও শারীরিক অসুস্থতার মতোই একটি রোগ। এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া তাওয়াক্কুলের (আল্লাহর ওপর ভরসা) পরিপন্থী নয়।

কারণ, নবীজি (সা.) বলেন, আল্লাহ এমন কোনো রোগ দেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। (সহিহ্ বুখারি: ৫৬৭৮)

সুতরাং, দুশ্চিন্তা বা হতাশা তীব্র হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ এবং কাম্য।

ইসলামি জীবনধারা মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতি শেখায়। আল্লাহর স্মরণ, বিপদে ধৈর্যধারণ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিকার গ্রহণ করার মাধ্যমেই একজন মুমিন এই দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে।

লেখক: মির্জা রিজওয়ান আলম, প্রাবন্ধিক

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

শীতকালে কখন তায়াম্মুম করা যাবে, কখন যাবে না

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

মক্কা-মদিনায় এক মাসে প্রায় ৭ কোটি মুসল্লির সমাগম

যাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের সতর্কবার্তা

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

গাজায় ৫০০ কোরআনের হাফেজকে রাজকীয় সংবর্ধনা