হোম > ইসলাম

মোগলদের নির্মিত মসজিদগুলো যেন আজও বিস্ময়

মোখতারুল ইসলাম মিলন

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে মোগল আমল এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ওই সময়ে মোগল শাসকেরা মুসলিম স্থাপত্যে অসাধারণ অবদান রেখেছিলেন, যার মধ্যে মসজিদ অন্যতম। মোগল আমলে নির্মিত মসজিদগুলো কেবল ইবাদতের স্থান হিসেবে নয়, বরং শিল্প ও স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। আজও মোগল আমলে নির্মিত মসজিদগুলো মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বহন করে চলেছে।

মোগল আমলে নির্মিত মসজিদগুলোর স্থাপত্যশৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য হলো বিশাল গম্বুজ, সুসজ্জিত মিহরাব, সুউচ্চ মিনার এবং পাথরের উৎকৃষ্ট কারুকাজ। মসজিদের দেয়ালে প্রায়ই আরবি ক্যালিগ্রাফি ও পবিত্র কোরআনের আয়াত অঙ্কিত থাকত। ওই সময়ে নির্মিত মসজিদগুলোতে সাধারণত সাদা মার্বেল, লাল বেলে পাথর এবং বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান রঙিন পাথর ব্যবহার করা হতো, যা মসজিদের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে তুলত।

বাদশাহি মসজিদ, লাহোর

সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক নির্মিত বাদশাহি মসজিদ লাহোরে অবস্থিত এবং এটি মোগল স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এর বিশাল প্রাঙ্গণ ও সুউচ্চ গম্বুজগুলো মসজিদটিকে এক জাঁকজমকপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। লাল বেলে পাথর ও মার্বেল দিয়ে নির্মিত এই মসজিদটি সৌন্দর্য ও স্থায়িত্বের এক অনন্য নিদর্শন।

জামে মসজিদ, দিল্লি

সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত দিল্লির জামে মসজিদ মোগল আমলের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৬৫৬ সালে নির্মিত এই মসজিদটির চমৎকার কারুকাজ, বিশাল গম্বুজ এবং সুউচ্চ মিনারগুলো ইসলামি স্থাপত্যের অসামান্য উদাহরণ। লাল বেলে পাথর ও সাদা মার্বেলের ব্যবহার মসজিদটিকে এক অনন্য রূপ দিয়েছে।

মোতি মসজিদ, আগ্রা

আগ্রার লাল কেল্লার ভেতরে অবস্থিত মোতি মসজিদটি সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত। মসজিদটির নির্মাণে সম্পূর্ণ সাদা মার্বেল ব্যবহৃত হয়েছে, যা এর নামকরণের পেছনে প্রভাব ফেলেছে ‘মোতি’ অর্থাৎ মুক্তার মতো উজ্জ্বল। এর নির্মাণশৈলী অত্যন্ত নিখুঁত এবং প্রতিটি অংশে মার্বেলের অসাধারণ কারুকাজ দেখতে পাওয়া যায়।

মোগল মসজিদের গঠনশৈলী

মোগল আমলের মসজিদগুলোতে সাধারণত তিনটি বড় গম্বুজ, নামাজের জন্য বিস্তৃত স্থান এবং একটি বিশাল প্রাঙ্গণ থাকত। মিনারের সংখ্যা মসজিদের আকার অনুসারে হতো এবং প্রতিটি মিনারে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা হতো। মিহরাব অংশটিকে সুসজ্জিত করার জন্য মার্বেল বা মূল্যবান পাথর ব্যবহৃত হতো। নামাজের স্থানের জন্য বিস্তৃত জায়গা এবং প্রাঙ্গণের চারপাশে খোলা স্থান রাখা হতো, যাতে বড় জনসমাগম হতে পারে।

মোগল মসজিদগুলোতে ইসলামি ভাবধারা গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়। তাদের নির্মাণশৈলীতে আধ্যাত্মিকতা এবং নান্দনিকতা মিশ্রিত হয়েছিল, যা মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর প্রতি মোগলদের আন্তরিক ভালোবাসার প্রকাশ। মসজিদগুলো কেবল ইবাদতের জায়গা হিসেবে নয়, বরং শিক্ষাকেন্দ্র ও সমাজের মিলনস্থল হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। এর ফলে মসজিদগুলো মুসলিম সংস্কৃতি ও ইসলামি সভ্যতার প্রতীক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মোগল আমলের মসজিদগুলো ইসলামি স্থাপত্যশৈলীর এক বিশেষ নিদর্শন, যা সেই সময়ের শিল্প এবং ধর্মীয় অনুভূতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। মোগল আমলে নির্মিত মসজিদগুলো আজও ইতিহাস, শিল্প এবং সংস্কৃতির সাক্ষী হিসেবে অটুট আছে। এগুলো কেবল ঐতিহাসিক স্থাপনা নয়, বরং মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিশ্ববাসীর জন্য খোলা রেখেছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, শরীফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা

সন্তান আল্লাহর রহমতের স্নেহমাখা উপহার

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

জমাদিউস সানির দ্বিতীয় জুমা: মুমিনের করণীয়

মসজিদগুলো হয়ে উঠুক শিশুবান্ধব

ফুটপাতে পথশিশুদের হিমশীতল রাত

ফরজ গোসলের সময় নারীদের চুল ধোয়ার বিধান

শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার হারিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়

আজকের নামাজের সময়সূচি: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

দাওয়াতুল হকের মারকাজি ইজতেমা শনিবার

একের পর এক ভূমিকম্প মুমিনকে যে সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে