মোমিনের কোনো কিছুই বৃথা যায় না। সে যে অবস্থারই সম্মুখীন হোক—তার দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-মসিবতের বিনিময়ে তাকে পুরস্কৃত করা হয়। তার গুনাহ মাফ হয়। এ হিসেবে দুঃখ-কষ্ট তার জন্য নেয়ামত ও রহমত।
অবশ্য এটা নেয়ামত হবে তখন, যখন বান্দা তাতে সবর করবে। সবর না করলে কষ্টের কষ্টও হলো, আবার লাভও হলো না। সবর না করলে কষ্ট লাঘব হবে—এমন তো নয়।
সুতরাং বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হলো, কষ্টের সময় অধৈর্য না হয়ে সবর করা। তাতে কষ্ট হলেও সে কষ্ট বৃথা যায় না। বরং পাপের বোঝা হালকা হয়। এমনকি সবরের কারণে কষ্টও লাঘব হয়।
হাদিসে এসেছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশান আসে—এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করেন। (সহিহ্ বুখারি: ৫২৩৯)
কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদ-মসিবতে গুনাহ মাফ হয়। এ হিসেবে এটা একটা নেয়ামত। তাই বলে এই নেয়ামত চাওয়া ঠিক নয়। এমন দোয়া করা যাবে না—‘হে আল্লাহ, আমাকে বিপদ-মসিবত দিয়ে গুনাহ মাফ করুন। দুনিয়ায় কষ্ট দিয়ে পরকালের আজাব থেকে মুক্তি দিন।’
বরং এর জন্য তওবা ও ইসতিগফার করা চাই। আর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে যে মসিবত আসে তাতে কর্তব্য হচ্ছে ধৈর্যধারণ করা।
বিপদ-আপদ চাওয়া এক ধরনের ধৃষ্টতা। কারণ, বান্দার কাজ বাহাদুরি দেখানো নয়; বরং সব সময় নিজ দুর্বলতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করা। এ জন্যই নবী করিম (সা.) বিপদ-আপদ না চেয়ে বরং শান্তি, সুস্থতা ও নিরাপত্তা প্রার্থনার শিক্ষা দিয়েছেন।
নবীজি (সা.) বলেন, ‘হে লোকসকল, তোমরা শত্রুর সাক্ষাৎ কামনা করো না। বরং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা কর। তবে যখন শত্রুর মুখোমুখি হবে, তখন সবর অবলম্বন করো। (সহিহ্ মুসলিম: ৪৩৯২)
লেখক: শিক্ষক, বাইতুল আকরাম মসজিদ ও মাদরাসা কমপ্লেক্স টঙ্গী, গাজীপুর