শীতকাল আল্লাহর নেয়ামতের ঋতু। ফলমূল ও শস্যে পরিপূর্ণ হয় শহর-গ্রাম। রসে রসে টইটম্বুর হয় খেজুরগাছে ঝুলে থাকা কলসি। প্রকৃতিতে আসে নতুন সাজ। শীতকাল মানুষের সামাজিক জীবনেও অনেক ভূমিকা রাখে। আত্মীয়তার সম্পর্ক করে দৃঢ়। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদিসে এসেছে, হজরত জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯৮৪)
পৌষ ও মাঘ মাসের তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে যায় মানুষ। ঘন কুয়াশায় ছেয়ে যায় চারদিক। ধনাঢ্য ও বিত্তবানেরা আবৃত হয় শীতের দামি পোশাকে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন শ্রেণির মানুষ হয়ে পড়ে অসহায়। এই শীতে ধনাঢ্য লোকদের উচিত মধ্য ও নিম্নবিত্ত আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া। সামর্থ্য অনুযায়ী পরিধেয় পোশাক উপহার দেওয়া। কেননা, উপহারের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘পরস্পর হাদিয়া দাও, মহব্বত বাড়বে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ৫৯৪)
অন্য আরও এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম অন্য মুসলিমকে পোশাক পরিধান করায়, তখন দানকারী আল্লাহর হেফাজতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত দান গ্রহণকারী সে পোশাকের টুকরাবিশেষও ব্যবহার করতে থাকে। অর্থাৎ কাপড়টি পরিত্যক্ত হওয়া পর্যন্ত দানকারীকে আল্লাহ তাআলা বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করেন।’ (জামে তিরমিজি: ২৪৮৪)
শীতকাল আল্লাহর নেয়ামতে পরিপূর্ণ থাকে। গাছিরা খেজুরগাছ থেকে রস নামান। ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠাপুলির উৎসব। পিঠাপুলির আনন্দ আত্মীয়স্বজনের মাঝেও ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। শীতকালীন পিঠা, খেজুরের রস ও গুড় একে অপরকে হাদিয়া দেওয়া। মধ্য ও নিম্ন শ্রেণির আত্মীয়কে দাওয়াত দেওয়া। কেননা, হাদিয়া দ্বারা পারস্পরিক দূরত্ব কমে যায়। তৈরি হয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আত্মীয়স্বজনকে খাদ্যদানের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে দুটি পথ প্রদর্শন করেছি। অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে, দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে এতিম আত্মীয়কে অথবা ধূলি-ধূসরিত মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো।’ (সুরা বালাদ: ১০-১৬)
আর হাদিসে অসহায় আত্মীয়স্বজন বা ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানো সর্বোত্তম কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করেন—‘ইসলামে কোন কাজটি শ্রেষ্ঠ?’ মহানবী (সা.) বলেন, ‘ইসলামে সবচেয়ে ভালো কাজ হচ্ছে ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানো।’ (সহিহ্ বুখারি: ১২, সহিহ্ মুসলিম: ৩৯)
লেখক: ইমাম ও খতিব, ভবানীপুর জামে মসজিদ, ২ নম্বর ওয়ার্ড, গাজীপুর সিটি।