নামাজ মুসলমানের জীবনের প্রাণ, ইমানের প্রমাণ। দিনে পাঁচবার আল্লাহর সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়া আত্মশুদ্ধির এক মহা সুযোগ। নামাজের পরপরই অনেকেই দ্রুত নিজ কাজে বেরিয়ে পড়েন। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবনে আমাদের শিখিয়েছেন, ফরজ নামাজ শেষে কিছু ছোট ছোট আমল আছে, যেগুলোর মাধ্যমে ইমান আরও পরিশুদ্ধ হয়, হৃদয় প্রশান্ত হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া যায়। এসব আমল সংক্ষিপ্ত হলেও বরকত অসীম।
ফরজ নামাজের পর আমল
» এক. রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি ফরজ নামাজ শেষে তিনবার বলতেন, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট ক্ষমা চাই।’ এরপর তিনি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া জাল-জালালি ওয়াল ইকরাম।’ অর্থ, ‘হে আল্লাহ, আপনি শান্তির উৎস এবং আপনার থেকেই শান্তি আসে। আপনি মহিমান্বিত ও বরকতময়।’ এই আমলের বর্ণনা সহিহ মুসলিমের ১২১২ নম্বর হাদিসে পাওয়া যায়।
» দুই. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে এবং শেষে বলবে—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’, তার গুনাহ সাগরের ফেনারাশির মতো হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ মুসলিম: ৪৯০৬)
» তিন. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (সুনানে নাসায়ি: ৯৯২৮)
ফজর ও মাগরিবের পর দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন—ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর সাতবার পড়তে হবে, ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার’। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ: ২৩৯৬)। যদিও হাদিসটি সনদের দিক থেকে দুর্বল, তবু আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে মত দিয়েছেন ইসলামবিষয়ক গবেষকগণ।
কোরআন তিলাওয়াতের আমল
নামাজের পর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত অন্যতম শ্রেষ্ঠ জিকির। সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন নামাজের পর বিভিন্ন সুরা পাঠ করতেন—ফজরের পর সুরা ইয়াসিন, জোহরের পর সুরা ফাতহ, আসরের পর সুরা নাবা, মাগরিবের পর সুরা ওয়াকিয়া, এশার পর সুরা মুলক।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও প্রতি রাতে সুরা সাজদাহ ও সুরা মুলক পাঠ না করে ঘুমাতেন না। (জামে তিরমিজি: ২৮৯২)
ফরজ নামাজ শেষে এই সংক্ষিপ্ত আমলগুলো আমাদের আত্মাকে করে তুলবে প্রশান্ত, মনকে দেবে শান্তি, আর জীবনকে করে দেবে বরকতময়। নামাজ শেষ হওয়া মানেই ইবাদতের শেষ নয়; বরং সেটাই আল্লাহর স্মরণে নতুন করে ডুবে যাওয়ার সময়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কিছুক্ষণ যদি আমরা এসব দোয়া ও তিলাওয়াতে ব্যয় করি, তাহলে আমাদের প্রতিটি দিন হবে আলোকিত, আর হৃদয় ভরে উঠবে ইমানের মাধুর্যে।