পৃথিবীর বুকে মানুষকে প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অতিবৃষ্টি প্রভৃতি দুর্ঘটনা আর দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়। এসব মহান আল্লাহর সূক্ষ্ম পরিকল্পনারই অংশ। দুর্যোগ-দুর্ঘটনার মাধ্যমে তিনি মানবজাতিকে পরীক্ষা করেন।
মনে রাখার বিষয় হলো, শুধু আমরাই যে দুর্ঘটনা আর দুর্যোগের মাধ্যমে আল্লাহর পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছি—এমন নয়। যুগ যুগ ধরেই তিনি তাঁর বান্দাদের এভাবে পরীক্ষা করে আসছেন—বাদ যাননি নবী-রাসুলগণও। হজরত আদম (আ.), নুহ (আ.), ইয়াকুব (আ.), ইউসুফ (আ.), ইবরাহিম (আ.), মুসা (আ.), জাকারিয়া (আ.), ইয়াহইয়া (আ.), ইসা (আ.), এমনকি আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনেও আল্লাহর পরীক্ষা ছিল। এই পরীক্ষার কথা মনে করিয়ে দিয়ে নবী (সা.)-কে আল্লাহ বলেন, ‘আপনি কি মনে করেন যে আপনি ইমান আনবেন, আর আপনাকে পরীক্ষা করা হবে না?’ (সুরা আনকাবুত: ২)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের শুভসংবাদ দাও, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫-১৫৬)
তাই আল্লাহর পরীক্ষায় পতিত হলে কোনোভাবেই বিচলিত হওয়া যাবে না। নামাজ এবং ধৈর্যের মাধ্যমে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। তাঁর কাছে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সাহায্য চাইতে হবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা: ১৫৩)
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো মুমিনের কর্তব্য
পৃথিবীর কোথাও যখন মানুষ এমন কঠিন দুর্যোগের কারণে বিপদগ্রস্ত হয়, তখন মানুষ হিসেবে তাদের বিপদে এগিয়ে যাওয়া এবং সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। ইসলামে সকল মুসলমানকে একটি দেহের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া-মায়া ও স্নেহ-মমতার দিক থেকে গোটা মুসলিম সমাজ একটি দেহের সমতুল্য। যদি দেহের কোনো বিশেষ অঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও তা অনুভূত হয়...’ (সহিহ মুসলিম: ৬৭৫১)। এই হাদিস প্রমাণ করে, মানবজাতির যেকোনো অংশের দুর্ভোগ অন্য অংশের জন্যও অনুভূত হওয়া উচিত।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ালে রয়েছে সওয়াব
প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মানুষকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে তোলে। তাই এ মুহূর্তে অসহায় মানবতার পাশে দাঁড়ানো দলমত-নির্বিশেষে সব ধর্মপ্রাণ মানুষের অবশ্যকর্তব্য। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা পরকালে অকল্পনীয় সওয়াব ও প্রতিদান নিশ্চিত করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটায়, তাদের জন্য আখিরাতে পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দান করেছে, সেদিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে সেদিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে সেদিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ)
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে যেভাবে দাঁড়ানো যায়
দুর্ঘটনার কারণে মানুষ বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ হারায় এবং চিকিৎসার অভাবে ভোগে। তাই দলবদ্ধভাবে অথবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদের পাশে দাঁড়ানো অত্যাবশ্যক। আমাদের উচিত:
১. প্রয়োজনীয় ত্রাণ তৎপরতা ও শুকনা খাদ্যসামগ্রী দেওয়া।
৩. আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা।
৩. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকনির্দেশনা অনুসরণ করা।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি মমতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা কেবল মানবসেবাই করি না, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং পরকালের বিশাল প্রতিদান নিশ্চিত করি।