ইসলামে জামাতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই জামাতে প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর যে বিশেষ ফজিলত রয়েছে, তা অসংখ্য হাদিসে প্রমাণিত।
প্রথম কাতারকে শুধু একটি স্থান হিসেবে নয়, বরং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও অফুরন্ত রহমত লাভের এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নামাজের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর ফেরেশতাদের বিশেষ মনোযোগ ও বরকত লাভ করে।
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য।’ (মুসনাদে আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ)
ইরবাজ ইবনে সারিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম কাতারে নামাজ আদায়কারীর জন্য তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এবং দ্বিতীয় কাতারের জন্য একবার।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)
প্রথম কাতারের ফজিলত এত বেশি যে যদি মানুষ তা জানত, তাহলে তারা এই সুযোগ লাভের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা করত।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি লোকেরা জানত যে আজান ও প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ে কী নেকি আছে, তাহলে তারা পরস্পর প্রতিযোগিতা করত। অনুরূপভাবে যদি তারা জানত এশা ও ফজরের নামাজে কী নেকি রয়েছে, তবে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও ওই দুই নামাজে আসত।’ অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘যদি লটারির মাধ্যমে নির্বাচন ব্যতীত এই সুযোগ লাভ করা সম্ভব না হতো, তাহলে অবশ্যই তারা লটারির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিত।’ (সহিহ্ বুখারি, সহিহ্ মুসলিম)
প্রথম কাতার ফেরেশতাদের কাতারের অনুরূপ। ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার সামনে যেভাবে কাতারবদ্ধ হন, মুসল্লিদেরও সেভাবে প্রথম কাতার পূর্ণ করে ঘন হয়ে দাঁড়ানো উচিত। জাবির ইবনে সামুরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কি সেভাবে কাতারবদ্ধ হবে না, যেভাবে ফেরেশতারা তাঁদের রবের সামনে কাতারবদ্ধ হন?’ সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ফেরেশতারা কীভাবে তাঁদের রবের সামনে কাতারবদ্ধ হন? জবাবে তিনি বললেন, তাঁরা আগে প্রথম কাতার পূরণ করেন এবং কাতারে ঘেঁষে ঘেঁষে দাঁড়ান।’ (সহিহ্ মুসলিম)
নামাজে প্রথম কাতারে দাঁড়ানো শুধু একটি পছন্দের বিষয় নয়, বরং এটি বিশেষ ফজিলত, আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ।
একজন মুমিনের উচিত, জামাতের শুরুতে মসজিদে উপস্থিত হয়ে এই বরকতময় স্থানটি লাভের জন্য সচেষ্ট হওয়া। এর মাধ্যমে ব্যক্তি যেমন আধ্যাত্মিক দিক থেকে লাভবান হন, তেমনি জামাতের মধ্যেও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় থাকে।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কসবামাজাইল, পাংশা, রাজবাড়ী।