জমাদিউস সানি আরবি বর্ষপঞ্জির ষষ্ঠ মাস। জমাদিউস সানিকে আবার কেউ জুমাদাল উখরা বা জুমাদাল আখিরাহ বলে থাকে। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে জমাদিউস সানি নামেই বেশি পরিচিত। জুমাদা অর্থ হলো শীতকাল। আরবে এই মাস অতিবাহিত হতো প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশার মধ্য দিয়ে। তাই এটিকে শীতের দ্বিতীয় মাস বলা হতো, যা বসন্তের নিকটবর্তী, গ্রীষ্মের পূর্ববর্তী।
জমাদিউস সানি আমাদের মাঝে নিয়ে আসে শীত মৌসুমের বার্তা। শীত ও গরমে বিশেষ ইবাদত প্রসঙ্গে কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেহেতু কুরাইশদের আসক্তি আছে; তাদের আসক্তি শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তারা এ (কাবা) গৃহের প্রভুর ইবাদত করুক। যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দিয়েছেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেছেন।’ (সুরা কুরাইশ: ১-৪)
বিশেষত শীতকাল মুমিনের জন্য ইবাদতের মৌসুম। শীতকালে কিছু কিছু নেক কাজ সহজে করে নেওয়া যায়। যেমন, অনেকেই নফল রোজা রাখতে চান, কিন্তু গরমকালে দিন বড় হওয়ায় রাখতে পারেন না। আবার কেউ কষ্ট-ক্লেশ করে নফল রোজা রাখেন। কিন্তু শীতকাল সকলের জন্য রোজা রাখার সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে হাজির হয়। কেননা শীতকালে দিন ছোট হওয়ায় সহজে রোজা রাখা সম্ভব। তাই আমরা এ সময় বেশি বেশি রোজা রাখতে পারি।
আবার আসন্ন ফজিলতপূর্ণ রজব মাসের প্রস্তুতি হিসেবে জমাদিউস সানি মাসে ইবাদতের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া যায়। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ‘যিনি রাতের মূল্য দেন, তাঁর কাছে প্রতিটি রাতই শবে কদর।’ অর্থাৎ নেক আমলই সাধারণ সময়কে বিশেষ প্রয়োজনীয়তায় রূপ দেয়। তাই এই মাসে বেশি বেশি নেক আমল করা আমাদের গুরুদায়িত্ব। প্রতিটি বিষয়ের জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নেওয়া যেমন দায়িত্বশীলতার পরিচয়। ঠিক প্রতিটি খাঁটি মুমিনের জন্য মাহাত্ম্য ও মর্যাদাপূর্ণ মাসের জন্য অপেক্ষা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি ও বাঞ্ছনীয়।
সেই সঙ্গে এ কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, মুমিনের নেক আমলের জন্য কোনো মৌসুমই মূল্যহীন নয়। তাই অন্য মাসের মতো এ মাসেও বেশি পরিমাণে নেক আমল করা উচিত। এই মাসে নফল নামাজ ও নফল রোজা আদায় করা, দান-সদকাহ করা। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ তথা তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত ও আউওয়াবিন নামাজ আদায় করা। এ ছাড়া সামনে রমজান মাস আসছে—পূর্বের বছরগুলোর কাজা রোজা থাকলে তা সম্পন্ন করা; মানত রোজা থাকলে তা আদায় করা। অন্যথায় সময়ের অপচয়ের জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনা করতে হবে। এ সম্পর্কে স্পষ্ট হাদিসে এসেছে—মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতিদের জান্নাতে যাওয়ার পর দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস থাকবে না। শুধু ওই সময়ের জন্য আফসোস হবে, যা আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অনর্থক কথা বা কাজে অতিবাহিত হয়েছে।’ (সুনানে বায়হাকি: ৫০৯)
শেষ কথা হলো, আলোচিত মাস শীতকাল ও রজব মাসের প্রস্তুতি হিসেবে জমাদিউস সানি ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। নফল রোজা, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, জিকির, তাসবিহ, দোয়া, দান-সদকা, ওমরাহ হজ ইত্যাদির মাধ্যমে এ মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়।
লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া তাসমিয়া মাদ্রাসা, কুষ্টিয়া।