মানুষ সৃষ্টিকুলের মধ্যে আল্লাহর এক অসাধারণ সৃষ্টি। মহাবিশ্বের সব প্রাণীকে মানুষের অধীন করে দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষ তাদের থেকে উপকৃত হতে পারে এবং আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারে। তবে এই অধীনতা জুলুমের লাইসেন্স নয়। কারণ, ইসলামে প্রাণীর প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রাণীরা বাক্শক্তিহীন হলেও, পরকালে আল্লাহ যখন তাদের বাক্শক্তি দান করবেন, তখন তাদের ওপর করা প্রতিটি জুলুমের হিসাব দিতে হবে।
ইসলামে প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরে একটি হাদিসে এসেছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি উটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যা অনাহারে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তা দেখে তিনি বললেন, ‘তোমরা এই সকল বোবা পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। এদের দানা-পানি দিয়ে সুস্থ-সবল রাখো এবং সুস্থ-সবল পশুর পিঠে আরোহণ করো, আর খাওয়ার সময়ও সুস্থ-সবল প্রাণীর গোশত ভক্ষণ করো।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৫৪৮)
এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, প্রাণীর দেখাশোনা করা শুধু একটি নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি আল্লাহর প্রতি আমাদের ভয়েরও বহিঃপ্রকাশ। তাদের শুধু প্রয়োজন মিটিয়ে রেখে দিলেই চলবে না, বরং তাদের পূর্ণ দেখভালের দায়িত্ব আমাদের কাঁধে নিতে হবে। সময়মতো খাবার দেওয়া, অসুস্থ হলে সেবাযত্ন করা, অতিরিক্ত বোঝা না চাপানো এবং অযথা মারপিট না করা—এগুলো সবই তাদের অধিকার।
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রাণীর প্রতি এই দয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে আমাদের এক মহৎ শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, উত্তম চরিত্রের পরিচয় শুধু মানুষের সঙ্গেই নয়, বরং সব সৃষ্টিজীবের সঙ্গেও সুন্দর আচরণ ও হক আদায়ের মাধ্যমে দিতে হয়। তা না হলে পরকালে বিচারের কঠিন কাঠগড়ায় আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।
ইসলামের এই মহান শিক্ষা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সৃষ্টিকুলের প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে।
লেখক: আলেম ও সম্পাদক