যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার রাতে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরছে। ১৯৯২ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায়নি। ট্রাম্প যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন, তবে তা নতুন করে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার আগুন জ্বালাতে পারে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসের খবরে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসার মাত্র এক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। আমার প্রথম মেয়াদকালে এসব অস্ত্রের সম্পূর্ণ আধুনিকায়ন ও সংস্কার সম্পন্ন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘বিশাল ধ্বংসাত্মক শক্তির কারণে আমি এটি করতে ঘৃণা করতাম, কিন্তু কোনো বিকল্প ছিল না! রাশিয়া দ্বিতীয় স্থানে, আর চীন অনেক পেছনে তৃতীয়—তবে পাঁচ বছরের মধ্যে তারা আমাদের ধরে ফেলবে, সমান হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘অন্য দেশের পরীক্ষামূলক কর্মসূচির কারণে আমি যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি আমাদের পারমাণবিক অস্ত্রগুলোও সমানভাবে পরীক্ষা শুরু করতে। এই প্রক্রিয়া এখনই শুরু হবে।’
এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, দেশটি সফলভাবে ‘পসাইডোন’ নামক একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপার টর্পেডো পরীক্ষা চালিয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই টর্পেডো উপকূলীয় অঞ্চল ধ্বংস করতে সক্ষম, কারণ এটি বিশাল রেডিওঅ্যাকটিভ সমুদ্র-স্রোত তৈরি করতে পারে।
অপরদিকে, ট্রাম্প যখন রাশিয়া বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ও অবস্থান আরও কঠোর করেছেন, তখন পুতিন প্রকাশ্যে তাঁর পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শন করছেন। গত ২১ অক্টোবর নতুন ‘বুরেভেসনিক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা এবং ২২ অক্টোবর পারমাণবিক হামলার মহড়া তারই প্রমাণ।
যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ ১৯৯২ সালে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল। পারমাণবিক পরীক্ষা থেকে জানা যায়, নতুন অস্ত্র কতটা কার্যকর হবে এবং পুরোনো অস্ত্রগুলো এখনো কাজ করছে কি না। প্রযুক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি, এমন পরীক্ষা রাশিয়া ও চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনের একটি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও বিবেচিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক যুগের সূচনা করেছিল ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্দোতে ২০ কিলোটন ক্ষমতার একটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়ে। সেই বছরের আগস্টে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যার মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।