যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শিকার শিশুদের নিয়ে তাঁর উদ্বেগ জানিয়ে লেখা চিঠির জবাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর সঙ্গে একটি ‘খোলা যোগাযোগের মাধ্যম’ স্থাপনের পর ইউক্রেনীয় শিশুদের তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন করানো সম্ভব হয়েছে।
গত আগস্টে আলাস্কা সফরের সময় পুতিনের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল ফার্স্ট লেডির সেই ‘শান্তির চিঠি’।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই চিঠির কিছু অংশ প্রকাশ করেন। তাতে পুতিনকে ইউক্রেনের যুদ্ধশিশুদের সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেলানিয়া লেখেন, ‘এটি শুধু রাশিয়ার উপকার করবে না, বরং সমগ্র মানবতার কল্যাণে আসবে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউসে গতকাল শুক্রবার মেলানিয়া জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আটটি শিশুকে তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত করা গেছে। এই শিশুগুলো ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্থিরতা ও কষ্টের মধ্যে ছিল।
ইউক্রেনে ফেরত আসা এই আট শিশুর মধ্যে তিনটি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সম্মুখযুদ্ধের ফলে রাশিয়ায় চলে গিয়েছিল বলে জানান তিনি।
আরেকজন কিশোরী, যে সংঘাতের কারণে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিল, তাকেও নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ফার্স্ট লেডি।
শিশুদের পুনর্মিলন প্রক্রিয়া ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় দেশই যৌথভাবে সম্পন্ন করেছে বলে উল্লেখ করেন মেলানিয়া।
মেলানিয়া জানান, প্রতিটি শিশুর ‘পরিচয় ও অবস্থা’সংবলিত বিস্তারিত প্রতিবেদন ও ছবি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। মার্কিন সরকারও এই তথ্যগুলো যাচাই করে নিশ্চিত করে।
মেলানিয়া জানান, রুশ প্রেসিডেন্টকে চিঠি পাঠানোর পর তিনি এ বিষয়ে ‘অনেক কিছু শিখেছেন’ এবং পুতিন লিখিতভাবে জবাব দিয়েছেন।
চিঠিতে ফার্স্ট লেডি লিখেছিলেন, ‘প্রতিটি শিশুর হৃদয়ে একই নীরব স্বপ্ন থাকে—ভালোবাসা, সম্ভাবনা আর বিপদ থেকে নিরাপত্তার স্বপ্ন।’
ইউক্রেন সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর কমপক্ষে সাড়ে ১৯ হাজার ইউক্রেনীয় শিশুকে জোর করে তাদের ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে রাশিয়া ও রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কেবল ১ হাজার ৬০৫টি শিশুকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন সরকারের ‘চিলড্রেন অব ওয়ার’ ডেটাবেইস।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ২০২৩ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তাঁর শিশু অধিকারবিষয়ক কমিশনার মারিয়া লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় শিশুদের অবৈধভাবে দেশান্তরের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
রাশিয়া যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিল, রুশ বাহিনী মূলত শিশুদের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।