সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যেন আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক। একের পর এক বিতর্ক ও জরিমানা লেগেই আছে। এরই মধ্যে হোয়াইট হাউস সংবাদমাধ্যম ও সংবাদ ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ওয়েবসাইটে একটি নতুন বিভাগ চালু করেছে, যাতে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ সংবাদ ও সংবাদকর্মীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের দাবি, এই সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকেরা সংবাদ উপস্থাপনায় বিকৃতি ও পক্ষপাতদুষ্টতা দেখিয়েছে।
এই পাতার শীর্ষে লেখা রয়েছে: ‘মিসলিডিং। বায়াসড। এক্সপোজড।’ এর নিচে বোস্টন গ্লোব, সিবিএস নিউজ এবং দ্য ইনডিপেন্ডেন্টকে ‘এক্সপোজড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘সাপ্তাহিক মিডিয়া অপরাধী’ হিসেবে তাদের নাম তুলে ধরা হয়েছে। এই তিন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ট্রাম্পের ছয়জন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতার বক্তব্যের ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে, যাঁরা সামরিক সদস্যদের অবৈধ নির্দেশ অনুসরণ না করার জন্য ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন।
ট্রাম্পের সামাজিক মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহমূলক আচরণ, যা মৃত্যুদণ্ড যোগ্য’ অভিযোগ করার পর বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তিনি পুনরায় এক পোস্টে লেখেন, ‘হ্যাং দেম।’
ওয়েবসাইটটি বলেছে, ‘ডেমোক্র্যাটরা এবং ফেক নিউজ মিডিয়া নেপথ্যভাবে বোঝাতে চেয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামরিক সদস্যদের ওপর অবৈধ নির্দেশ জারি করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে কোনো নির্দেশ জারি করেছেন তা আইনসঙ্গত। মার্কিন সেনাবাহিনীতে অসহযোগিতা উসকে দেওয়া অবস্থানরত কংগ্রেস সদস্যদের জন্য বিপজ্জনক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁদের দায়বদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।’
ওই পাতায় ‘অফেন্ডার, হল অব শেম’ নামের একটি বিভাগও রয়েছে, যেখানে ওয়াশিংটন পোস্ট, সিবিএস নিউজ, সিএনএন ও এমএসএনবিসি (এখন এমএস নাউ নামে পরিচিত) -এর নাম রয়েছে। এখানে লেখাগুলো ও লেখকদের নাম রয়েছে। প্রতিটি লেখাকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’, ‘অপব্যবহার’ বা ‘বামপন্থী উন্মাদনা’ এর মতো লেবেলে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটের ওই পাতায় একটি লিডারবোর্ডে ওয়াশিংটন পোস্টকে শীর্ষ অপরাধী হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে এমএসএনবিসি এবং সিবিএস নিউজ।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে স্বস্তিকা ও ফাঁসের দড়ি নিয়ে কোস্ট গার্ডের একটি বিতর্কিত নীতি প্রকাশ করা হয়, যার ফলে জনরোষ তৈরি হয়। কোস্ট গার্ড সেই নীতি কার্যকর হওয়ার আগেই তা প্রত্যাহার করে নেয় এবং ঘৃণার প্রতীকগুলোর বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে।
কোস্ট গার্ডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট অ্যাডমিরাল কেভিন লানডে এক বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলেন, এই প্রতীকগুলো আগে থেকেই এবং এখনো নিষিদ্ধ এবং এদের প্রদর্শন কঠোরভাবে তদন্ত করা হবে।
ওয়াশিংটন পোস্ট এই দ্রুত প্রত্যাহারের কথা পরবর্তী একটি নিবন্ধে স্বীকার করেছে।
এছাড়াও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, পলিটিকো এবং অ্যাকসিওসকেও দীর্ঘ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে হোয়াইট হাউস। তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট বা মিথ্যাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ট্রাম্পের মিডিয়ার ওপর দীর্ঘকালীন আক্রমণের সর্বশেষ ধাপ ওয়েব পেইজের এই সূচনা। এর আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে মামলা, এবিসি ও সিবিএসের সঙ্গে আইনি সমঝোতা এবং বড় সংবাদমাধ্যমগুলোকে ‘জনগণের শত্রু’ হিসেবে অভিহিত করেন ট্রাম্প।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, ট্রাম্প নারী সাংবাদিকদের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণও তীব্র করেছেন। এ মাসের শুরুতে তিনি ব্লুমবার্গ নিউজের এক সাংবাদিককে ‘পিগি’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
কয়েকদিন পরে এবিসি নিউজের এক সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যা এবং এপস্টেইন কেলেঙ্কারির বিষয়ে প্রশ্ন করার পর, ট্রাম্প ওই সাংবাদিককে ‘ভয়ানক মানুষ’ বলে অভিহিত করেন।
গত সপ্তাহে, ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একজন সাংবাদিককে ‘থার্ড ক্লাস সাংবাদিক, ভেতর ও বাইরে উভয়ই কুৎসিত’ বলে মন্তব্য করেন। ওই নিবন্ধে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, ৮০ বছর বয়সী প্রেসিডেন্টের শক্তি কমে যাচ্ছে।