সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করছে এবং দেশের রক্ত দূষিত করছে।’ ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে ভয়াবহ, অমানবিক ও ফ্যাসিবাদী বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন কংগ্রেসের আইনপ্রণেতা প্রমীলা জয়পাল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার ওয়াশিংটনের ডেমোক্র্যাট পার্টির নির্বাচিত আইনপ্রণেতা ও কংগ্রেসনাল প্রগ্রেসিভ ককাসের চেয়ার প্রমীলা জয়পাল বলেন, ‘এটি ভয়াবহ। দক্ষিণ সীমান্তে আসা অভিবাসীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য অমানবিক ও ফ্যাসিবাদী। এগুলো বিপজ্জনক মিথ্যা, অভিবাসীদের দুর্বৃত্ত হিসেবে চিহ্নিত করা এবং তাঁর ভয়ংকর নীতি গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এগুলো সাজানো হয়েছে।’
প্রমীলা জয়পাল বলেন, ‘কেন আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিতে ফিরে যেতে পারি না—এই বক্তব্য তার একটি ভালো উদাহরণ। তিনি আমেরিকা থেকে অভিবাসীদের মুছে ফেলতে চাইছেন। তাঁর কোনো নীতিই অভিবাসনব্যবস্থার সংস্কারবিষয়ক নয়, যা এমন কোনো ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারে যে অভিবাসীদের জন্য আমেরিকাই ভালো।’
৯১টি ফৌজদারি অভিযোগ এবং বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হওয়ার পরও রিপাবলিকান পার্টির থেকে প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন পাওয়ার তালিকায় আধিপত্য বিস্তার করে আছেন ট্রাম্প। তার পরও নিউ হ্যাম্পশায়ার ও নেভাডায় নির্বাচনী সমাবেশে এমন একই মন্তব্য করেছেন তিনি।
গত শনিবার নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডারহামে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তারা (অভিবাসীরা) আমাদের দেশের রক্ত দূষিত করছে।’ এমন মন্তব্য তিনি আগেও করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তারা (অভিবাসীরা) এমনটা করেই যাচ্ছে। তারা কেবল দক্ষিণ আমেরিকায় নয়, সারা বিশ্বে মানসিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারাগারগুলো দূষিত করে তুলছে। দক্ষিণ আমেরিকাসহ এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যুক্তরাষ্ট্রে আসছে। তারা আমাদের দেশের রক্ত দূষিত করছে। সমগ্র বিশ্ব থেকেই তারা আমাদের দেশে ভিড় জমাচ্ছে।’
গত রোববার নেভাডার রেনোতে ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘এটা একধরনের আক্রমণ। এটা একধরনের সামরিক আক্রমণ। মাদক, অপরাধী, গ্যাং সদস্য এবং সন্ত্রাসীরা আমাদের দেশে রেকর্ড পরিমাণে প্রবেশ করছে। আমরা আগে কখনো এমন কিছু দেখিনি। তারা আমাদের শহরগুলো দখল করে ফেলছে।’
ট্রাম্পের এ ধরনের বক্তব্যের সঙ্গে শিক্ষাবিদ, ভাষ্যকার ও রাজনৈতিক বিরোধীরা অ্যাডলফ হিটলার, বেনিতো মুসোলিনি এবং অন্যান্য স্বৈরাচারী নেতাদের বক্তৃতার মিল খুঁজে পেয়েছেন।
গত শনিবার নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ‘স্ট্রংমেন: মুসোলিনি টু দ্য প্রেজেন্ট’ বইয়ের লেখক রুথ বেন ঘিয়াত বলেন, ‘ট্রাম্পের লক্ষ্য হলো অভিবাসীদের জীবনকে মানবেতর হিসেবে চিহ্নিত করা, যেন প্রেসিডেন্ট হয়ে ফিরলে অভিবাসীদের ওপর তাঁর নিপীড়ন জনগণ মেনে নেয়।’