যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্য স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন ঘটার সাক্ষী হলো। আলাস্কার আর্দ্র বিকেলে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের প্রেসিডেন্ট একই স্থানে পা রাখলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা রাখলেন, আর তাঁকে স্বাগত জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁদের স্বাগত জানাতে বিছানো হয়েছিল লালগালিচা।
পুতিনকে বহনকারী বিমান আমেরিকার আকাশসীমায় প্রবেশের পর সেটিকে এসকর্ট করে চারটি মার্কিন যুদ্ধবিমান। পরে সেই চারটি যুদ্ধবিমান পুতিনের বিমানকে আলাস্কার মার্কিন সামরিক ঘাঁটি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। বিমান থেকে নামার পর লালগালিচার পথে হাঁটতে হাঁটতে ট্রাম্প একাধিকবার হাততালি দিয়ে অতিথিকে স্বাগত জানান।
তবে এই দৃশ্য কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দেয়নি—যেমন ইউক্রেনে চলমান রুশ যুদ্ধ থামাতে তাঁরা কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবেন কি না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অনুপস্থিত থাকায় এমন চুক্তি করার সম্ভাবনা সীমিত।
লালগালিচার ওপর হাঁটার সময় ট্রাম্প হাত প্রসারিত করে মঞ্চ এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখান পুতিনকে। তাঁরা যখন মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁদের মাথার ওপর উড়তে দেখা যায় এক বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান, যা পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের ক্ষমতা রাখে। আকাশে এর উপস্থিতি যেন অনুষ্ঠানের ঝলমলে পরিবেশে এক শীতল কঠোর বাস্তবতার বার্তা পৌঁছে দেয়।
উভয় নেতা এরপর নীল রঙা মঞ্চে ওঠেন, যেখানে লেখা ছিল ‘ALASKA 2025.’ অনুষ্ঠান আয়োজনের ধরন, স্থান ও শিরোনাম দেখে বোঝা যাচ্ছিল না যে আসলে তাঁরা কী অর্জন করতে চাইছেন। কয়েক দিন ধরে সাংবাদিকদের সঙ্গে নানা তাৎক্ষণিক আলাপচারিতার পর ট্রাম্প হঠাৎই চুপ ছিলেন।
মঞ্চে ওঠার পর এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন, আপনি কি বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধ করবেন?’ পুতিনের মুখে ফুটে ওঠে বিরক্তি মিশ্রিত কৌতুকময় অভিব্যক্তি। তিনি কানে হাত দিয়ে বোঝাতে চাইলেন শুনতে পারছেন না। এরপর ট্রাম্প অতিথিকে প্রেসিডেন্টের সাঁজোয়া গাড়ি ‘দ্য বিস্টের’ দিকে নিয়ে যান। এ সময় লালগালিচার পাশেই মজুত ছিল মার্কিন এফ-২২ যুদ্ধবিমান। অবশ্য আগেই পৌঁছানো পুতিনের জন্য নির্ধারিত লিমুজিন ফাঁকাই পড়ে রইল।
বেসের ভেতরের এক কক্ষে নীল ব্যানারের সামনে বসে উভয় নেতা শান্তির আলোচনা শুরু করেন। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘Pursuing Peace বা শান্তির সন্ধানে।’ তবে আলোচনার শুরুতেই ট্রাম্প অস্বাভাবিকভাবে নীরব ছিলেন। উভয় নেতা তাঁদের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টাদের সঙ্গে বসে উপস্থিত সাংবাদিকদের দিকে নজর রাখছিলেন।
এই বৈঠক প্রদর্শন করল রাজনৈতিক প্রটোকল নয়, বরং দুই নেতার ব্যক্তিগত আঙ্গিক ও শক্তির প্রদর্শনীই প্রাধান্য পেয়েছে। আলোচনার মূল লক্ষ্য—ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করা—তবে এখনো স্পষ্ট নয়।
তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস